ভোজ্য তেলে ৭০%, ডালে ৬০% ঘাটতি

বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ ভোজ্য তেল প্রয়োজন, উৎপাদনে ঘাটতি থাকে তার ৭০ শতাংশ, যা মেটাতে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2020, 02:40 PM
Updated : 27 Dec 2020, 02:40 PM

একইভাবে ডালের চাহিদার ৬০ শতাংশ এবং মসলায় ৩০-৩২ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট–বিএআরআই এর এক যৌথ প্রতিবেদনে।

তবে ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব খাদ্যপণ্যের আমদানি নির্ভরতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প-তৃতীয়য় পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ নিয়ে এক কর্মশালায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন প্রকল্পের পরিচালক খায়রুল আলম।

সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা যেখানে ১০ দশমিক ৫১ লাখ মেট্রিন টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এখন ১৮ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে। আর ডালের চাহিদ ৪৫ গ্রাম।

সে হিসাবে বছরে ২৬ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন ডালের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশের উৎপাদন হচ্ছে ৯ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন।

বছরে ৪০ দশমিক ৪ লাখ মেট্রিক টন মসলার চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদিত হয় ৩৯ দশমিক ৫৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ফসল সংরক্ষণের উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন মসলা নষ্ট হয়। ফলে শতকরা হিসেবে ৩০ শতাংশের মত ঘাটতি থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প’ হাতে নেয় ২০১৭ সালে। তবে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে।

২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সারা বছর ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। সেই সঙ্গে উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এসব ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তাতে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে।

প্রকল্পে মৌচাষ সম্পৃক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ১৫-৩০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি মধু উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ উৎসাহিত হবে বলে সরকার মনে করছে।  

প্রকল্প পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে ১২ দশমিক ০৭ লাখ মেট্রিক টন, ডাল ১১ দশমিক ২২২ লাখ মেট্রিক টন, মসলা ৪০ দশমিক ৭৭৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে সম্ভব হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

এর আওতায় সারা দেশে ৪৫০০টি বীজ এসএমই-এর অধীনে ৪ বছরে ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় বিভিন্ন ফসলের মোট ৩৫ হাজার ৯১৫ টি বীজ উৎপাদন ব্লক স্থাপিত হবে। প্রতিটি ব্লকের আয়তন ১ একর ও ৫ শতক।

প্রতিবেদনে বলা হয়ম এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৭৫টি বীজ উৎপাদন ব্লক তৈরি হয়েছে। ২০২০-২১ বছরে ৯ হাজার ৩২০টি বীজ উৎপাদন ব্লক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্পের পুরো সময়ে প্রায় ১১ হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন উন্নতমানের বীজ উৎপাদিত হবে ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “দেশে ডালের উৎপাদন বেড়ে এখন ৮-৯ লাখ মেট্রিক টন হচ্ছে। তারপরেও একটা বিরাট পরিমাণ ডাল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তেল আমদানি করতে আমাদের ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়।”

তিনি বলেন, “দেশের উপকূলীয় এলাকায় এখন ডাল হচ্ছে; ডালের সম্ভাবনাও আছে। ডালের ভালো জাত ছিল না। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই, তারা মুগডালের অনেক ভালো জাত উদ্ভাবন করেছে। সেগুলো যদি মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি, তবে উৎপাদন বাড়বে।”

তবে কৃষিমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করছেন ভুট্টা, ড্রাগন ফল, টমেটোর মত ‘অপ্রচলিত অর্থকরি’ ফসলের ওপর।

“এসব এখন সারা বছর ধরেই চাষ হচ্ছে, কারণ চাহিদা আছে। স্ট্রবেরির পাশাপাশি এখন নীলফামারীতে কফির চাষও হচ্ছে। এগুলো তো অনেক লাভজনক। সম্প্রতি আমার এলাকায় (মধুপুরে) একজন বিদেশি ব্যবসায়ী জানালেন, যদি প্রতি দিন ৩০ টন অ্যালোভেরা দিতে পারি, তিনি রপ্তানি করবেন। কিন্তু সেখানে আমি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, ১-২ টনের মত অ্যালোভেরা দিতে পারবে।”

এসব অর্থকরি ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ‘সবাইকে এক জায়গায় বসে’ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কোন এলাকায় কোন ফসলটি আসলে ভালো হবে, তা বৈজ্ঞানিকভাবেই ভাবতে হবে।”