কোভিড-১৯: দ্বিতীয় প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অর্থনীতির ক্ষতি সামাল দিতে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার; মাঝে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও শীতে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে অর্থ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2020, 02:55 PM
Updated : 23 Dec 2020, 03:23 PM

বুধবার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) চূড়ান্তকরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউকে সামনে রেখে আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থবিরতা নামার ‍শুরুতেই গত মার্চে সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই অঙ্ক জাতীয় বাজেটের এক-পঞ্চমাংশের বেশি, মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সরকারের গঠিত ওই তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে মালিকরা। পাশাপাশি বড় শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রের জন্যও ছিল এই ধরনের তহবিল বরাদ্দের সুযোগ।

প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বেতন হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের

সরকারের ওই গুচ্ছ প্রণোদনার প্রশংসা করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঠিক সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে মহামারীর মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

তবে শীতে ইউরোপ-আমেরিকায় সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে লকডাউন শুরু হচ্ছে দেশে দেশে, বিমান চলাচলও আগের মতো সীমিত হয়ে আসছে।

এই পরিস্থিতিতে নতুন অর্থবছরে আগের মতো একটি প্রণোদনা চেয়ে আসছেন দেশের পোশাক রপ্তানিকারক থেকে শুরু করে শিল্পোদ্যোক্তারা।

সম্প্রতি এক আলোচনায় অর্থনীতির গবেষক ড. সেলিম রায়হানও বাংলাদেশে মহামারীর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের প্রস্তাব করেন। তবে তিনি সেই সঙ্গে বর্তমান প্যাকেজের একটি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে মত দেন।

আগের প্রণোদনায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল

>> রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল (মোট বরাদ্দ ৫,০০০ কোটি টাকা)।

>> ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান (মোট বরাদ্দ ৩৩,০০০ কোটি টাকা)।

>> ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান (মোট বরাদ্দ ২০,০০০ কোটি টাকা)।

>> নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (মোট বরাদ্দ ৩,০০০ কোটি টাকা)।

>> লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ (মোট বরাদ্দ ১২,৫৮ কোটি টাকা)।

সভায় ‘সকলের সঙ্গে সমৃদ্ধি পথে’ স্লোগানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি)) সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) শামসুল আলম।

গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী খসড়ায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগভিত্তিক পরিকল্পনাগুলো দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন।

উপ প্রেসসচিব তুষার বলেন, “অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার স্ট্যাট্রেজি এবং অ্যাকশন প্ল্যান আলাদাভাবে হাইলাইট করতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।”

আগামী একনেক সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সভায় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দি থাকার সময় জেলে বসে দেশের উন্নয়নে একটি রোডম্যাপ তৈরির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্তী শেখ হাসিনা।

শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।