রিজার্ভ থেকে ঋণের সিদ্ধান্ত বাজেটের আগেই চূড়ান্ত হতে পারে: অর্থমন্ত্রী

আগামী বাজেটের আগেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2020, 10:55 AM
Updated : 17 Dec 2020, 10:58 AM

বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষ ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংবাদ বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম ৩০ ডিসেম্বরের আগে রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাব। আমরা তার আগেই তা নিয়ে যেতে পেরেছি। এটিই জাতির জন্য পাওনা।”

মহামারীর মধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

মন্ত্রী বলেন, “আমাদের কমিটমেন্ট আছে ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভকে ৫০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাব। হিসাব করেই বলছি এবং প্রত্যাশা করি, সে লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারব।”

গত জুলাই মাসে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভ থেকে ঋণের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।

ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে ডলারে ঋণ নিই। আমাদের রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আমরা ঋণ নিতে পারি কি না? বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের পক্ষে এই টাকা সংরক্ষণ করে। ওখান থেকে আমরা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে পারি। বিদেশ থেকে আমরা যে সুদে ঋণ আনি তা একটু কম হলেও দেশের টাকা ব্যবহার করলে লাভটা দেশেই থাকবে।”

এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন বলে আমি মনে করি। বাইরে ইনভেস্ট করলে ১ থেকে ২ শতাংশের বেশি আমরা পাই না। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি বিনিয়োগ করা হয় এবং সেগুলো ডলারে রিসিভ করতে পারি তাহলে ফান্ড ফ্লো ইনটেক থাকল এবং আমাদের ইনকামটাও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।

“প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন এবং স্টাডি করছেন আমাদের আগামীতে কী পরিমাণ ফান্ড প্রয়োজন হবে, বিশেষ করে মেগা প্রকল্পে পেমেন্ট করার জন্য। সে সমস্ত বিষয় বিচার বিবেচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, বাজেটের আগেই হয়ত তিনি চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। যেহেতু তিনি বলেছেন তাই মনযোগ দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।”

মুস্তফা কামাল বলেন, “রিজার্ভের এর মূল ভিত্তি হচ্ছে রেমিন্টেন্স, এটি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। যে সময় ব্যাংকগুলোর চাহিদার চেয়ে বেশি রেমিন্টেন্স আসে তখন তারা বাজারে বিক্রি করে। বাজারে বিক্রি করলে কিনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এ কারণেই রিজার্ভ বাড়ে- এটি মূল কারণ।”

গত জুলাই থেকে নভেম্বর ৫ মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বছরের টার্গেটের ৬০ শতাংশ ৫ মাসে চলে এসেছে। এই ফ্লো অব্যাহত রাখতে পারলে রিজার্ভ ফান্ড বেড়ে যাবে। পাশাপাশি যে সমস্ত মেগাপ্রকল্প আছে সেগুলোর পেমেন্টও করতে হয়।

“জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলারের মতো পেমেন্ট করেছি, সেটাও ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে যাচ্ছে। সব কিছু যাওয়ার পরও ৪২ বিলিয়ন ডলার নেট হাতে আছে।”

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে প্রায় সাড়ে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।