চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: প্রযুক্তি আয়ত্তে আনতে হচ্ছে টাস্কফোর্স

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের অনুশাসন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2020, 12:30 PM
Updated : 7 Dec 2020, 12:30 PM

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি ও সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য করতে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট’র (এনএসডি) তত্ত্বাবধানে কর্মসূচিও নেবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কিত বিষয়গুলো’ মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইসিটি বিভাগ থেকে অনেক বড় উপস্থাপনা দেওয়া হয়েছে।

“ভবিষ্যৎটা নির্ভর করছে কীভাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে হ্যান্ডল করব। যদি আমরা এটাকে ঠিকভাবে হ্যান্ডল করতে না পারি, তাহলে আমাদের জন্য একটু অসুবিধা হবে। কারণ সব টেকনোলজি, উৎপাদন পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।

“সেক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ম্যানপাওয়ার কমে যাবে, আবার অন্য জায়গায় লাগবে। এ শিফটিংগুলোও করতে হবে। আমাদের ওয়ার্ক ফোর্সকে সেইভাবে ডেভলপ করে নিয়ে আসতে হবে। এগুলো আমরা যদি না করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বা অর্থনীতি বা টেকনোলজির সব দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ব।”

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ১০টি প্রযুক্তিকে ‘পয়েন্ট আউট’ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আগামী দিনে এই ১০টি টেকনোলজি সারা পৃথিবী বিট করবে। এ টেকনোলজিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের বেশ কয়েকটা গার্মেন্টসে এবং ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিটে রোবট ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। অনেক গার্মেন্টস একটা খাত মেকানাইজ করে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের ম্যানপাওয়ারকে শিফট করে দিতে হবে।”

দশটি প্রযুক্তি হল- অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস, ক্লাউড টেকনোলজি, অটোনোমাস ভেহিকল, সিনথেটিক বায়োলজি, ভার্চ্যুয়াল অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবট, ব্লাক চেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং ও ইন্টারনেট অব থিংকস বা আইওটি।

আনোয়ারুল বলেন, “এই ১০টি টেকলোনজির সঙ্গে আমাদের ম্যাচ করতে হবে।”

শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে তিনটি সমস্যা দেখা দেবে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, মেশিন বা রোবট অনেক মানুষকে রিপ্লেস করে ফেলবে। এজন্য যারা চাকরি হারাবে তাদেরকে পরিকল্পনা করে অন্য জায়গায় চাকরি দিতে হবে।

“এটা নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ জার্মানি হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সব থেকে অ্যাডভান্স। কিন্তু সেখানে বেকারের সংখ্যা পৃথিবীর সব থেকে কম,” আশ্বস্ত করতে বলেন তিনি।

“দ্বিতীয় সমস্যা হবে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যে জ্ঞান আছে, তা পরিপূর্ণভাবে ইক্যুপ্ট করতে পারবে না। সেজন্য আমাদের আরেকটু অ্যাডভান্স এডুকেশনে যেতে হবে।

“তৃতীয় বিষয় হল- আমাদের ফিন্যান্সিয়াল বা ইকোনমিক পলিসিতে কিছু নতুন জিনিস আনতে হবে। কারণ প্রাথমিক বিনিয়োগটা বড় হবে। যার ফলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা আছে আছে তাদের জন্য একটু অসুবিধা হতে পারে, নিজের টাকা দিয়ে ইক্যুপ্ট করা। সেজন্য রাষ্ট্র বা সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসতে হবে যাতে এ জাতীয় উদ্যোক্তাদের ব্যাকআপ করা যায়।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এজন্য প্রস্তাব এসেছে, একটা বড় টাস্কফোর্স গঠন করে আলাপ-আলোচনা করে এখন থেকেই কীভাবে কো-অপ্ট করব। লেবার শিফটিং হলে কীভাবে শিক্ষা দিয়ে দক্ষ করব। বিশ্বব্যাপী যে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হচ্ছে সেখানে দক্ষ করে তৈরি করে পাঠানো। টাস্কফোর্স চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের টেকনোলজি ও সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য করে শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন কিছু ঢোকানো এবং ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট’র (এনএসডি) তত্বাবধানে ম্যাসিভ কর্মসূচি গ্রহণ করা।”

শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে প্রয়োজন হলে একটা স্টিয়ারিং কমিটি বা জাতীয় একটি কমিটি গঠন করে সুপারভাইজ করে পরামর্শ দেবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তিনটি সেক্টর থাকবে- বায়োলজিক্যাল, ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল। এই তিন সেক্টরেই আমাদের কাজ করতে হবে।

“স্টিম ইঞ্জিন করতে দেড়শ বছর, টেলিফোন জনপ্রিয় করতে ৭৫ বছর, রেডিও ৩৮ বছর টেলিভিশন ১৩ বছর লেগেছে ৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছাতে। এখন স্কাই টেকনোলজি বা স্যাটেলাইট টেকনোলজি ৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে ৩৫ দিনের মধ্যে। মোবাইল ফোনের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এজন্য তিনটি সেক্টরেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “একটা সময় আসবে মানুষের শরীরে যদি একটা চিপস দেওয়া যায়, তাহলে হাতের মুঠোয় শুধু কি-প্যাড থাকবে, ফোন লাগবে না। এই কি-প্যাড দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ অপারেট করা যাবে। টেকনোলজি ওই লেভেলে চলে যাবে, এজন্য আমাদের এগুলো আয়ত্তে আনতে হবে।”