দেশের উন্নয়ন চিত্রে আন্দোলিত হই: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, কয়েক বছর আগের তুলনায় দেশে যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে তা দেখে আন্দোলিত হন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2020, 12:32 PM
Updated : 5 Dec 2020, 12:32 PM

শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘যুব এবং লিঙ্গ ভিত্তিক ইস্যুগুলো মহামারীর আলোকে পাঁচশালা পরিকল্পনায় প্রতিফলন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, “দেশের তুলনামূলক উন্নয়নের বাস্তব চিত্র দেখলে আমি আন্দোলিত হই। মাত্র দশ বছর আগে হাওড়ের যে অবস্থা ছিল, এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ওই এলাকার গ্রামগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। এটা যখন দেখি আমি আনন্দিত হই।”

তবে এতেই সন্তুষ্ট না হয়ে দেশের মানুষের উন্নয়নে আরও কাজ করার তাগাদা অনুভব করার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান।

অনুষ্ঠানের আয়োজকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যখন আমাদের কাছাকাছি অন্যান্য দেশগুলোর তুলনা করে দেখান তখন আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের আরও অনেক উন্নয়ন করতে হবে। আমি মনে করি, এটাই সত্য। আমাদের উন্নয়নের আরও গভীরে যেতে হবে।”

মন্ত্রী বলেন, “আমাদের যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করতে হবে এর কোনও বিকল্প নেই। তবে আমাদের যে প্রযুক্তি এবং জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে এটারও উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে।”

শিক্ষাখাতে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে’ বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বিদিশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারী বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

“কিন্তু এই মহামারী কতটুকু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে বা এ বিষয়ে আমাদের অনুমান কতটুকু সে বিষয়ে আমরা কেউ নিশ্চিত নই। অনেকে এ বিষয়ে নানা রকম তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় এ বিষয়ে উপযুক্ত একটি মূল্যায়ন দরকার।”

তিনি বলেন, “এটা নিশ্চিত যে ২০১৯ সালের তুলনায় বেশ কিছু জায়গায় আমরা পিছিয়ে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে জায়গাটায় যথাযথ একটি মূল্যায়ন দরকার।

সেই মূল্যায়নটা যদি যথাযথ না হয় তাহলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যেসব কর্মসূচি নেওয়া হবে সেই কর্মসূচিগুলো ঠিক বাস্তবসম্মত হবে না বলে আমার মনে হয়।”

তার মতে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা যদি যথাযথ মূল্যায়নের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও গতানুগতিক হয়ে যাবে। অথচ এমন পরিস্থিতিতে গতানুগতিকভাবে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, এবার স্কুলে ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি হতে পারে। কারণ দারিদ্র্য এক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কর্মসংস্থান হারিয়ে অনিশ্চিত কাজ কর্মে জড়িত হচ্ছে।

“তাই আমরা ঠিক কোন অবস্থানে আছি সেটা জানা খুব জরুরি।”

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের পরিসংখ্যানের গুণগত মান এবং এর আওতা আরও সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

“আমাদের পরিসংখ্যানের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। পরিকল্পনা করতে গেলেই তো পরিসংখ্যান লাগে। আমাদের পরিসংখ্যানটা এখনও ওই পর্যায়ে আসেনি তবে আমরা কাজ করছি উন্নয়নের জন্য।

“পরিসংখ্যান সমস্যা নিয়ে উদ্বেগের সাথে সাথে আত্মতুষ্টিতে না থেকে দেশের আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। একইসঙ্গে আমরা মানসম্পন্ন পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এর আওতাও বাড়াতে চাই আমরা।”

আলোচনায় মূল প্রবন্ধে সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষক ইশরাত শারমিন বলেন, “আমাদের জনমিতিক সুবিধা পুরোপুরি নিতে হলে আমাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আয়, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচাতে হবে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৪০ সালে বাংলাদেশের জনমিতিক সুবিধা শেষ হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে এর সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে না পারলে সরকার উন্নত দেশে উন্নীত করার যে লক্ষ্য নিয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হবে।

অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. সাইদ আলী বলেন, যুব উন্নয়নের জন্য সরকার একটি ইয়ুথ অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে মধ্যে ৮০ লাখ যুবককে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে প্রকৌশল শিল্পের জন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হবে।