আখ মাড়াই বন্ধ থাকছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ চিনিকলে

লোকসান কমাতে চলতি মাড়াই মওসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2020, 03:41 AM
Updated : 5 Dec 2020, 03:41 AM

এই খবরে ওই সব কারখানার শ্রমিক-কর্মকর্তাদের মধ্যে চাকরিচ্যুতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আপাতত তাদের বেতন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন-বিএসএফআইসি।

চলতি মাসের শুরুতে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের চিঠি বৃহস্পতিবারই সংশ্লিষ্ট মিলগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পৌঁছে গেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাবনা সুগার মিল, শ্যামপুর সুগারমিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগারমিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে উৎপাদন কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিনিকলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ দিন ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই ‘সংস্কার ও আধুনিকায়নের’ উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।

কয়েকজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে চিঠিতে চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাতে সংস্কার কিংবা আধুনিকায়নের কথা বলা হয়নি। তবে বেতন অব্যাহত রেখে কেবল উৎপাদন বন্ধ রাখলেও ‘কয়েক কোটি টাকার’ লোকসান ঠেকানো যাবে বলে জানান তারা।

অধিক লোকবল, মেশিনের দক্ষতা নষ্ট হওয়া, কাচামালের ঘাটতি, দীর্ঘ দিন জমতে থাকা ব্যাংক ঋণের সুদ ও বছরের প্রায় ১০ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে প্রতি বছরই প্রায় হাজার কোটি টাকা লোকসন গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকল। এসব কারণে  বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত সাদা চিনি বাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও সরকারি চিনিকলগুলো উৎপাদিত চিনির দাম পড়ে যাচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। ঋণজালে জর্জরিত কারখানাগুলো সময়মতো আখচাষীদের পাওনা পরিশোধ করার সক্ষমতাও হারাতে বসেছে।

বিগত কয়েক বছরে মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ভর্তুকির টাকা দিয়ে মাড়াই মওসুমের নানা সঙ্কট উৎরাতে পারলেও গত অর্থবছরে সেই ভর্তুকিও কমিয়ে দিয়েছে সরকার।

বেতনের দাবিতে বিক্ষোভে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের শ্রমিকরা। (ফাইল ছবি)

বিএসএফআইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৭০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে চিনিকলগুলো। বিগত পাঁচ বছরে জমতে থাকা লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯৭৬ কোটি টাকা।

গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আখ মাড়াই শেষে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে সেতাবগঞ্জ সুগার মিল। এ বছর উৎপাদন বন্ধ রাখার চিঠি পেয়েছে কারখানাটি। ফলে এই চিনিকলের আওতাভূক্ত আখগুলো চলে যাবে পাশের ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে।

সেতাবগঞ্জ সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মিলে চুক্তিভিত্তিক দেড়শ জনবলসহ মোট ৫০০ স্থায়ী লোকবল রয়েছে। এর বাইরে মাড়াই মওসুমে কাজ করার মতো আরও প্রায় ৪০০ লোকবল রয়েছে। তবে মাড়াই বন্ধ থাকার কারণে মওসুমের অন্তত ৪০০ জনকে বেতন দিতে হবে না। যারা স্থায়ী নিয়োগে রয়েছেন তাদের বেতন দিতে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকা করে প্রয়োজন হবে।

চিনি কলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আখ। (ফাইল ছবি)

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার নয়টি সুগারমিল চলবে এবং বাকি ছয়টি বন্ধ থাকবে। চিনি শিল্পের ইতিহাসে আগে কখনোই এমন ঘটনা ঘটেনি।

“লোকসান কমিয়ে আনার জন্য করপোরেশন এই চিন্তা করেছে। যেহেতু প্রডাকশন কষ্ট বেশি পড়ছে সে কারণে খরচ কিছুটা কমবে।”

পাবনা সুগার মিলে মোট জনশক্তি ৬৮৭ জন। এর বাইরে মাড়াই মওসুমে আরও কয়েকশ মানুষ সেখানে চাকরি করেন। এক কোটি টাকা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রয়োজন হয় বেতন বাবদ।

অবসর সময়ে জনশক্তিকে কী কাজে লাগানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসরের সুযোগে শ্রমিকরা অন্য মিলে গিয়ে কাজ করবেন। আর পাবনার আখ যাবে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে।