রিটার্ন দাখিলে সময় ‘বাড়তে পারে’

যে সব করদাতা এখনও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, ৩০ নভেম্বর সোমবারের মধ্যে জমা দেবেন না তাদের জন্য ‘সুখবর’ আসতে পারে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2020, 06:42 PM
Updated : 30 Nov 2020, 05:28 AM

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় রিটার্ন দাখিলের বাড়তি সময় পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের ঘোষণা আসছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে রাজি হননি এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, যারা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না বা দেবেন না, তারা বাড়তি সময় পেতে চলেছেন। সেটা এক-দুই মাস সময় বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার এই এক-দুই মাস জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমা নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হতে পারে।

আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় অর্থমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে শনিবার করদাতাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার বাড়তি সময় দিতে অনুমতি দিয়ে গেছেন। সেই বিষয়টিই রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হবে।

“সময় বাড়ানো হোক বা জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমার সুযোগ দেওয়া হোক- দুটো আসলে একই বিষয় দাঁড়াবে।”

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাশের আগে করোনাভাইরাস মহামারী বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। সেই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এনবিআর চাইলে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের যে কোনো জরিমানা ও সুদ মওকুফ করে দিতে পারবে। বাজেট অধিবেশনে এনবিআরের এই ক্ষমতাকে আয়কর অধ্যাদেশের ১৮৪(জি) ধারা হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে।

তাই এনবিআর এখন চাইলে সময় না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জরিমানা ও সুদ মওকুফ করলেই সময় বৃদ্ধির কাজটি হয়ে যাবে।

আবার এনবিআর যদি মনে করে সরাসরি সময় বাড়াবে, সেটাও করতে পারে।  রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সে ক্ষমতাও এনবিআরকে দিয়ে রেখেছেন।

সেক্ষেত্রে অধ্যাদেশ দিয়ে সরাসরি সময় বাড়ানো হতে পারে। কিংবা প্রজ্ঞাপন দিয়ে এক-দুই মাসের জন্য জরিমানা ও সুদ মওকুফ করা হতে পারে।

এনবিআরের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, “সব কিছুই আসলে দেশের স্বার্থে। আমরা সবাই বুঝতে পারছি, একটি কঠিন সময় পার করছি আমরা। মহামারীর কারণে এবার কর মেলা আয়োজন করা যায়নি। মহামারীর প্রকোপ বাড়ায় অনেক করদাতা রিটার্নের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে পারেননি। সবকিছু মিলিয়েই করদাতাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে।”

ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, আয়কর আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবীরা ইতোমধ্যে রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এনবিআরে চিঠি দিয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগেই সময় বাড়াতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছি। এরমধ্যে মহামারীর প্রকোপ আরও বেড়েছে। আশা করছি, করদাতাদের সমস্যার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সময় বাড়াবে। অথবা বিকল্প কোনো সুযোগ দেবে।”

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো উচিত। এক-দুই মাসের জন্য জরিমানা ও করের টাকার ওপর সুদ মওকুফ করলেও করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

“ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন জমা থেকে খুব বেশি আয়কর পাওয়া যায় না। এছাড়া রিটার্ন জমার সময় বাড়ালেও এক-দুই মাস পর সেই কর এনবিআর পাবে। তাই সময় বাড়ালে কিংবা জরিমানা ও সুদ মওকুফ করলে এনবিআরের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। কারণ বেশিরভাগ আয়কর আসে উৎসে কেটে রাখা কর থেকে।”

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবার আশানুরূপ আয়কর রিটার্ন জমা পড়ছে না। অনেকের আয়ও কমেছে।

করোনাভাইরাসের কারণে এবার কর মেলা হচ্ছে না। প্রতিটি কর অঞ্চল কার্যালয়ে কর মেলার সুবিধা থাকলেও সেখানে এবার ভিড়ভাট্টা তেমন একটা নেই। এ অবস্থায় ৩০ নভেম্বর রিটার্ন জমার সময় শেষ হচ্ছে। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর সরাসরি কোনো সুযোগ নেই। ফলে করোনাভাইরাসের মতো মহামারীতে সময় বাড়ানো কিংবা অন্য কোনো উপায়ে কীভাবে করদাতাদের স্বস্তি দেওয়া যায়, সেই পথ খুঁজছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যদিকে অনিশ্চয়তায় আছেন বহু করদাতা।

বর্তমানে দেশে ৪৬ লাখ কর শনাক্তকারী নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাদের মধ্যে ২২ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন দেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দিতে না পারলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেওয়া যায়। এজন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। তখন একজন কর কর্মকর্তা আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা, করের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ কিংবা করের টাকার উপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ আরোপ করতে পারবেন। আবেদন করে সময় পেলেও বিলম্ব সুদ দিতে হবে, জরিমানা দিতে হবে না।

কয়েক বছর আগেও প্রতিবার রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো হত। কিন্তু ২০১৬ সালে আয়কর অধ্যাদেশে পরিবর্তন এনে ৩০ নভেম্বর জাতীয় কর দিবসের পর রিটার্ন জমা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সময় বাড়ানোর পথটি বন্ধ হয়ে যায়।

ভারতেও ৩০ নভেম্বর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার কথা ছিল। ভারতের করদাতারা এপ্রিল থেকে পরের বছরের মার্চ পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন। কিন্তু এবার কোভিড-১৯ মহামারীতে গত অক্টোবর মাসে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সে দেশের করদাতারা রিটার্ন দিতে পারবেন। এর মানে, করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের করদাতারা এক মাস বাড়তি সময় পেয়েছেন।

শনিবার রাতে এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার সকাল ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।