ফের তলানিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি
আবদুর রহিম হারমাছি, প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 27 Nov 2020 11:41 AM BdST Updated: 27 Nov 2020 12:22 PM BdST
-
-
-
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন স্টলে দর্শনার্থীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে প্রণোদনায় ভর করে বাড়তে থাকা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ফের আবার তলানিতে নেমে এসেছে।
কমতে কমতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশের নিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছিল। প্রণোদনা ঋণে ভর করে এই প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছিল।
ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল নয় দশমিক ২০ শতাংশ। অগাস্টে তা বেড়ে নয় দশমিক ৩৬ শতাংশে উঠে। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে নয় দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়। অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ পয়েন্ট কমে আবার আট দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছে।
অর্থনীতির গবেষক ও ব্যাংকাররা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকার সোয়া লাখ কোটির টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি আসায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল। এখন প্রণোদনা ঋণ তেমন বিতরণ না হওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি ফের সেই তলানিতে নেমে এসেছে।

২০১৯ সালের অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সরকারি খাতেও ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমেছে। অক্টোবর শেষে সরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।
সেপ্টেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, টানা প্রায় ১০ বছর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্ক বা ১০ শতাংশের উপরে ছিল। তবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো তা নয় দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে এই প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে গত এপ্রিলে নয় শতাংশের নিচে নেমে আসে। ওই মাসে বেসরকারি ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে যায়। গত জুনে তা আরও কমে আট দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল, বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল আট দশমিক ৬১ শতাংশ।
প্রণোদনায় ভর করে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে
মহামারীর ধাক্কা: বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি তলানিতে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে গত দশ বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, গত জুন মাসের মত এত কম প্রবৃদ্ধি এক দশকে হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আট দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনিম্ন।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক আট শতাংশ। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল, বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল আট দশমিক ৬১ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকার প্রায় সোয়া লাখ কোটির টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি আসায় গত কয়েক মাস বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল।
“কিন্তু অক্টোবরে প্রণোদনার ঋণ তেমন বিতরণ হয়নি। বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ছোটদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঋণ খুব একটা বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলো। অন্য প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণও খুব একটা বিতরণ হয়নি। এছাড়া এই কয় মাসে প্রণোদনার বাইরে অন্য কোনো ঋণ বিতরণ হয়নি।
এ সব কারণেই অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ আবার কমে এসেছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর।

রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন স্টলে দর্শনার্থীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
“বেশ কিছুদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে তা আরও নাজুক হয়েছিল। ভালো খবর ছিল যে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেটা আবার হোঁচট খেলো মনে হচ্ছে। বেসরকারি ঋণপ্রবাহে যে গতি এসেছিল, সেটাও ধাক্কা খেয়েছে। সবকিছুই অনিশ্চিত এখন। কি যে হবে-নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কিছুই।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিএমএসএমইসহ অন্যান্য প্রণোদনার ঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নজরদারি ও তদারকি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারও ছোট ঋণ পাওয়ার সময় ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
“আশা করছি এ সব ঋণ বিতরণেও গতি আসবে।”
গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক তিন শতাংশ; যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে যথাক্রমে ৪৪ দশমিক চার শতাংশ ও ১৪ দশমিক আট শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, অক্টোবর শেষে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকার নিয়েছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৩২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
গত বছরের অক্টোবর শেষে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সরকারের ঋণ ছিল এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।
এ হিসাবে অক্টোবর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সরকারি ঋণের ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আর বেসরকারি খাতের আট দশমিক ৬১ শতাংশ।
কিছু ব্যাংকের আগ্রাসী বিনিয়োগের কারণে আড়াই বছর আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে ঋণ প্রবৃদ্ধি। ওই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের শুরুতে বেসরকারি ঋণপ্রবাহে লাগাম টানতে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। এর মধ্যে কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিল।
মহামারী মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার কোটি হাজার কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (সিএমএসএমই) ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল অন্যতম। এই দুই তহবিলের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা (১৫ হাজার ও ১০ হাজার কোটি টাকা) যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
-
সাড়ে ৬ মাসেই গত অর্থবছরের ৭৭% রেমিটেন্স
-
দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে চাই গবেষণায় নতুনত্ব: মন্ত্রী
-
সুবিধাবঞ্চিদের জন্য বিশ্বব্যাংকের আরও ৬৫ লাখ ডলার
-
রেমিটেন্সের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ
-
মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের আরও দুই প্রণোদনা
-
এলপিজির দাম মাসে মাসে নির্ধারণের প্রস্তাব
-
ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবনে জোর কৃষিমন্ত্রীর
-
আমদানির খরা কাটছে
-
সাড়ে ৬ মাসেই গত অর্থবছরের ৭৭% রেমিটেন্স
-
দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে চাই গবেষণায় নতুনত্ব: মন্ত্রী
-
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল
-
সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের আরও ৬৫ লাখ ডলার
-
রেমিটেন্সের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ
-
মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের আরও দুই প্রণোদনা
সর্বাধিক পঠিত
- বৃষ্টি নামবে, বাড়বে শীত
- ব্রিজবেন দুর্গ জয় করে ভারতের ইতিহাস
- সৌম্যকে জানানো হয়েছে ‘৪-৫ মাস আগে’
- অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু আর নেই
- নেইমার-এমবাপেকে থাকতে অনুরোধ করবে না পিএসজি
- নিজের ফ্ল্যাট থেকে মডেল নাজের লাশ উদ্ধার
- প্রিয় ৩ নম্বর হারাচ্ছেন সাকিব
- লাল কার্ড পাওয়া মেসির পাশেই কোচ
- রাজশাহীতে ট্রাফিক সার্জেন্ট পিটুনিতে আহত
- ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ মেসি