মহামারী মোকাবেলায় আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের পরামর্শ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ উঁকি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি সচল রাখতে জীবিকা ও কর্মসংস্থানের খাতগুলোকে কেন্দ্র করে আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2020, 01:14 PM
Updated : 26 Nov 2020, 01:14 PM

বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগ আয়োজিত ‘অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ভূমিকা’ শীর্ষক পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এ প্রস্তাব দেন অধ্যাপক সেলিম রায়হান, নাজনীন আহমেদ।

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক পরিচালক মার্সি মিয়ান টেম্বন, ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বক্তব্য রাখেন।

সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে মূল উপস্থাপনাটি করেন অর্থবিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এই অঙ্ক জাতীয় বাজেটের এক-পঞ্চমাংশের বেশি, মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ সঠিক সময়ে ঋণ প্রণোদনা বিষয়ক গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছিল। সে কারণে বিশ্ব অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়া ও ক্রেতা চাহিদা কমে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে।

জ্যেষ্ঠ সচিব রউফ বলেন, সরকার চেয়েছে মানুষের জীবনহানি যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখতে; খাদ্যাভাব, কর্মহীনতার মতো সমস্যাগুলো কমিয়ে মহামারীর সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে কর্মসংস্থান ধরে রাখা, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ শেকলের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে সাতটি প্যাকেজ। প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ফলে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৩৮ লাখ শ্রমিক এর সুফল পেয়েছ।

আলোচনা পর্বে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকনোমিক মডেলিং নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মহামারীর শুরুতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, এটা ছিল সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এই প্যাকেজ ঘোষণার পর অর্থায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। তাই বলা যায়, ভবিষ্যতেও এধরনের প্রকল্প চলমান রাখা যাবে।

শীত শুরুর পর সারাবিশ্বে এমনকি বাংলাদেশেও মহামারীর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে সেলিম রায়হান আরেকটি প্যাকেজের প্রস্তাব করেন।

তবে তার আগে বর্তমান প্যাকেজের একটি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

“বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এই স্টিমুলাস প্যাকেজের সুবিধা বেশি ভোগ করেছে, মাঝারি শিল্পগুলো কিছুটা কম সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো সেই তুলনায় পিছিয়ে আছে। এটা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজের আওতায় না পড়ার কারণে এবং প্যাকেজের নিয়মকানুন না বোঝার কারণে এই ঋণ নিতে পারেনি।”

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে অনেক কারখানায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল, কম শিক্ষিত ও কম প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছে। এখানি শিক্ষিত যুবকরা এই স্থান দখল করেছে।

“এখন নতুন করে এসব কর্মহীন নিয়ে ভাবতে হবে। যেহেতু ব্যাংকগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না, সেক্ষেত্রে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কিংবা পিকেএসএফের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করা অর্থ বিতরণ করা যেতে পারে।”

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ তাদের হাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার পরামর্শ দেন নাজনীন।

‍বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, এই মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিখাত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে গেছে।

“তবে আশা করছি, অচিরেই এই পরিস্থিতি থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আমরা যদি ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ভালোভাবে টিকে থাকতে পারি, তাহলে আমাদেরকে আর চিন্তা করতে হবে না। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন এধরনের আরেকটু সহায়তা।”

সবার কথা শুনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদরা যে পর্যালোচনা দিয়েছেন, তার সারবত্তা রয়েছে।

“এসএমই খাতগুলোতে এখনও বরাদ্দের সব টাকা পৌঁছানো যায়নি। এর জন্য আলাদা কর্মকৌশল ঠিক করা দারকার। আবার মহামারীর সেকেন্ড ওয়েব নিয়েও নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে।”