বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার আইডি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবী এখন এগিয়ে যাচ্ছে আর বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আসছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে লাগবে সব থেকে দক্ষ কর্ম যারা করতে পারবে।
“সেই ধরনের লোকবল আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। এই সব থেকে দক্ষ কর্ম জ্ঞান সম্পন্ন যে লোকবল সৃষ্টি, সেটা যদি আমরা এখন থেকে উদ্যোগ না নিই, আমরা কিন্তু পিছিয়ে যাব।”
বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা ‘অনেক বেশি মেধাবী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “খুব অল্পতে তারা শিখতে পারে। সরকার হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে সুযোগটা সৃষ্টি করা, সেটাই আমরা দিচ্ছি।”
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলা এবং তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আজ আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারছি, আপনাদের দেখতে পাচ্ছি এবং এই সুযোগটা আমরা পেয়েছি।”
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীকালে ঘরে থেকেই তিনি যে নানা অনুষ্ঠানে যুক্ত হতে পারছেন, তাতে অনেকের সংক্রমণের ঝুঁকি কমছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিলে অনেকেই তা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, অথচ এখন তার সুফল সবাই পাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে দেশের মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে শুধু দেশে না বিদেশেও কর্মসংস্থান বাড়বে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটাও একটা কাজ। এটাও এক ধরনের চাকরি। কিন্তু সেটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস এবং শুধু বস না, আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া, অন্যের বস হওয়া।”
ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ প্রাপ্তি সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি এবং আমাদের অর্থ সচিবের সাথেও আলোচনা করেছি, যাতে এই অসুবিধাটা আর না হয়।”
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসেন, তখনকার কথা স্মরণ করে বলেন, তখন দেশে অনেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করত না। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে তিনি কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন।
“জয়ের কাছ থেকে আমি কম্পিউটার শিখেছি। সে আমাকে পরামর্শ দিয়েছে, এখানে যদি আমাদের মানুষকে কম্পিউটার শেখাতে হয়, তার থেকে ট্যাক্স তুলে, ট্যক্স কমিয়ে দিয়ে তাদেরকে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই আধুনিক প্রযুক্তিই পারবে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা অনুধাবন করে তা বাস্তবায়নের জন্য নিজের ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা জয়ের কাছে পরামর্শ চাওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
“আজকে এই ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে সকল ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এতে ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক পরিচিতি তৈরির পাশপাশি ব্যাংক ঋণ পেতে পারবে এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করতে পারবে।”
ফ্রিল্যান্সিং গৃহিনীদেরও আয়ের পথ খুলে দেবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
“লেখাপড়া শিখে শুধু ঘরে বসে গিন্নীগিরি করা না, সেই সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিং করেও কিন্তু অনেকে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পাবে। তাতে ছেলে-মেয়েগুলো যেমন মাকে কাছে পাবে, আবার সাথে সাথে মাও কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবে।”
বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে চলার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা এবং জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খুনিদের ‘পুরষ্কৃত’ করার কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সচিব মো.তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটরিয়াম প্রান্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।