অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দাতাদের অর্থ ছাড় বেড়েছে

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ছাড়েও সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

জাফর আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2020, 03:13 PM
Updated : 25 Nov 2020, 03:13 PM

এর ফলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ কোটি ডলার বেশি ছাড় হয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ মিলে বিভিন্ন সময়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেখান থেকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১৭১ কোটি ১১ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসের এই ছাড় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বেশি।

গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ছাড় হয়েছিল ১৪৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। চলতি পুরো অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৬৪ কোটি ৭১ লাখ ডলার ছাড় করেছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছাড় করেছে ২৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। চীন ছাড় করেছে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। এছাড়া এই চার মাসে রাশিয়া ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং প্রতিবেশী ভারত ছাড় করেছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

এদিকে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থছাড় বাড়লেও দাতাদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে নতুন করে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার দিকে দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।

গত অক্টোবর পর্যন্ত ১২৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের নতুন প্রতিশ্রুতি এসেছে। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ সহায়তা হিসেবে ১০৪ কোটি ৮ লাখ এবং অনুদান হিসেবে ১৯ কোটি ২৬ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৮ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। গত অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত চার মাসে প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছিল ২২২ কোটি ২৭ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে ৬০০ কোটি ডলারের নতুন ঋণ প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির বৈদেশিক সহায়তা বাজেট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব পিয়ার মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে দাতাদের সঙ্গে যে কোনও নতুন ঋণ চুক্তি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে হয়। তাই নিয়ম করে মাসিক ভিত্তিতে টার্গেট করে ঋণের প্রতিশ্রুতি হবে এ ধরনের কোনও বিষয় নেই।

“সরকার প্রকল্প গ্রহণ করবে আর সেসব প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য দাতাদের কাছে প্রস্তাব করবে। সরকার ও দাতার মধ্যে যে প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে সমঝোতা হবে সে প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হয়।”

এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে দাতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এসব প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হলে শিগগির চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তখন প্রতিশ্রুতির অংক অনেক বেড়ে যাবে।

অর্থবছরের শেষ দিকে গিয়ে প্রতিশ্রুতি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দাতাদের পুঞ্জিভূত পাওনা থেকে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছে ৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দাতাদের পরিশোধ করতে হয়েছিল ৬৩ কোটি ১২ লাখ ডলার।

দাতাদের এই পাওনা পরিশোধের পর চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার দাতাদের কাছ থেকে নিট বৈদেশিক সহায়তা পেয়েছে ১০৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার।