প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে।
Published : 16 Nov 2020, 11:34 PM
চলতি নভেম্বর মাসের ১৫ দিনেই প্রায় ১২২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে দুই সপ্তাহে এত বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি দেশে।
আর এর মধ্য দিয়ে সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সাড়ে চার মাসেই (১ জুলাই থেকে ১৫ নভেম্বর) ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বা ৪২ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই সাড়ে চার মাসে ৭০৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি নভেম্বর মাসের ১৫ দিনে (১ থেকে ১৫ নভেম্বর) ১২১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
গত বছরের নভেম্বরের এই ১৫ দিনে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর পুরো নভেম্বর মাসে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
সবমিলিয়ে চলতি ১ জুলাই থেকে ১৫ নভেম্বর এক হাজার ৪ কোটি ১৬ লাখ (১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সোমবার বিকালে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্সের তথ্য দিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, ১ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। পরে রাতে ১৫ দিনের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সাড়ে চার মাসে রেমিটেন্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি আগে কখনই হয়নি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরের ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ রেমিটেন্স এই সাড়ে চার মাসেই এসেছে।
গত অক্টোবর মাসে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে মাসের হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
অগাস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে রেমিটেন্স কমবে বলে ধারণা করা হলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে তা বেড়েই চলেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতিই সংকটে পড়েছে। এ সময়ে আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা কষ্ট করে অর্থ পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।”
সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রণোদনার পর রেমিটেন্স পাঠানো বাড়তে শুরু করলে অনেকেই বলতে শুরু করলেন এগুলো ঠিক নয়, থাকবে না, টেকসই নয়।
“কিন্তু প্রণোদনা ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির যে প্রবাহ, তাতে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং আমরা যে সঠিক ছিলাম, আরও একবার তা প্রমাণিত হল।”
করোনাভাইরাস মহামারীর আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত এপ্রিল মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। এরপর থেকে রেমিটেন্স বাড়ছে।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সবমিলিয়ে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
আর এই রেমিটেন্সের উপর ভর করে মহামারীর মধ্যে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলা বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪০ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে।