সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে ২১১ কোটি ২০ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের চার মাসের তিন মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিটেন্স এসেছে।
সবমিলিয়ে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ (৮.৮২ বিলিয়ন) রেমিটেন্স এসেছে।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৬১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর পুরো বছরে এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা দেশের যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
অগাস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বে অর্থনীতি চুপসে যাওয়ার মধ্যে রেমিটেন্স কমবে বলে ধারণা করা হলেও তা উল্টো বেড়েই চলেছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত এপ্রিল মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো।
“এই যে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন এই রেমিটেন্স।”
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
রেমিটেন্স নিয়ে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “দেশের এক শ্রেণির লোক প্রতিমাসেই সমালোচনা করে বলছেন, পরের মাসেই কমে যাবে। বিশ্ব ব্যাংকও একই কথা বলেছিল, তারা বলেছিল আমাদের রেমিটেন্স ২২ শতাংশ কমে যাবে। এখন অবশ্য বলছে ৮ শতাংশ বাড়বে।
“আমরা প্রমাণ করেছি, আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনোরা প্রমাণ করেছেন, তাদের সবার কথা ভুল। আমার বিশ্বাস, রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে।”
বৈধ পথে রেমিটেন্স আনতে সরকার গত অর্থবছর থেকে যে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে, তার প্রভাব এতে পড়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রণোদনা ছাড়াও হজ ও ভ্রমণ বন্ধ থাকায় প্রবাসীদের খরচ কমে যাওয়ায় তারা অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। তাছাড়া হুন্ডি প্রায় বন্ধ থাকায় বৈধ পথে অর্থ আসা বেড়ে গেছে।
চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে আশা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, “রেমিটেন্সের উপর ভর করেই আমাদের রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড হচ্ছে। এই তো কয়েক দিন আগে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
“ডিসেম্বরের মধ্যেই এই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে যাবে। আর ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।”
রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে ১০ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।