দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে চীনা মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনিময় মুদ্রা হিসেবে চীন তাদের মুদ্রা আরএমবি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 02:10 PM
Updated : 29 Oct 2020, 02:10 PM

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বৃহস্পতিবার এক আলোচনায় জানিয়েছেন, ৫০০ কোটি পর্যন্ত আরএমবি (রেমমিনবি বা ইউয়ান) ব্যবহারের প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারে হয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হল চীন।

বাংলাদেশ-চীন উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে সিপিডি আয়োজিত ভার্চুয়াল ওই অনুষ্ঠানে লি জিমিং বলেন, “লেনদেন সহজ ও ডলারের উপর চাপ কমাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা লেনদেনের একটা অংশ চীনা মুদ্রা আরএমবি দিয়ে করতে পারে। এটা বছরে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) আরএমবি পর্যন্ত হতে পারে।

“তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ বিলিয়ন পর্যন্ত আরএমবি বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”

এই প্রক্রিয়া নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এ জন্য চীন সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫ বিলিয়ন আরএমবির একটি তহবিল জমা রাখবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরএমবির সঙ্কট হলে ওই তহবিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জোগান দেবে।”

বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন চীনের মুদ্রা। ছবি: রয়টার্স

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পাল্লা অনেক ভারী। বছরে দেশটি থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, বিপরীতে রপ্তানি ৯০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম।

সিপিডির অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি লি জিমিং বলেন, চীন বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করতে চায়। এক্ষেত্রে বিশেষ একটি মডেল তৈরি করে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী তার দেশ।

ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন এখন চালকের আসনে।”

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রতি চীন সরকার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য যে ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে, এতে আমরা বিপুলভাবে লাভবান হতে পারি।”

এর মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন শাহরিয়ার।

চীনের আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “চীন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও দেশটি বিপুল বিনিয়োগ করবে বলে আমি মনে করি।”

দেশের বিমানবন্দরগুলো আধুনিকায়নে চীনের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি সিপিডির চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, চীন যদি বাংলাদেশকে উন্নয়নের কৌশলগত বন্ধু হিসেবে নিয়ে থাকে, তাহলে চীনের বিআরআই (বিল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) এ যুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে।

চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বড় কাজ করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের শ্রমঘন খাতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সম্প্রতি চীন বাংলাদেশের প্রায় ৮ হাজার পণ্য রপ্তানিতে যে শূন্য শুল্কের সুবিধা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের মূল রপ্তানি পণ্য থাকতে হবে। না হলে এর সুফল বাংলাদেশ নিতে পারবে না।

করোনাভাইরাস মহামারী কাটিয়ে উঠতে কোভিড-১৯ এর টিকা দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতেও চীনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মাহবুব উজ জামান, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদুত হুমায়ুন কবিরসহ আরও অনেকে যুক্ত ছিলেন।