বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতিও চেয়েছেন তিনি।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বের আর্থিক খাতের দুই মোড়ল বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফারের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে মুস্তফা কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে এবার এ দুই সংস্থার ভার্চুয়াল সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনের ফাঁকে আজ আমি হার্টউইগ শেফারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে আমি একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি।
“আমি বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্টকে বলেছি, আমাদের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন এখন এক কোটির বেশি প্রবাসী ভাই ও বোনেরা। তাদের কষ্টার্জিত অর্থেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”
চলতি অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত (১ জুলাই থেকে ২১ অক্টোবর) ৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠানোর তথ্য জানান তিনি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
মহামারীতে বাংলাদেশের রেমিটেন্স ২২ শতাংশ কমবে বলে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা প্রতি মাসেই বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েই চলেছে। এই তো চলতি অক্টোবর মাসের ২১ দিনেই ১৫১ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। এই মাসেও রেমিটেন্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারে ডলারে পৌঁছবে বলে মনে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমি বেশ কয়েকবার আমার এই প্রবাসী-ভাইবোনদের ধন্যবাদ জানিয়েছি; কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আমি মনে করি, বিশ্ব ব্যাংকেরও এই প্রবাসীদের ‘স্বীকৃতি’ দেওয়া উচিৎ। উৎসাহিত করা উচিৎ। যাতে তারা ভবিষ্যতে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে অনুপ্রাণিত হন; উৎসাহিত হন। বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
“হার্টউইগ শেফারকে আমি এটাও বলেছি যে, বিশ্বে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংস্থা বিশ্ব ব্যাংকের এমন কোনো মন্তব্য করা উচিৎ হবে না, যাতে এই প্রবাসীরা নিরুৎসাহিত হন।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যে সব দেশের প্রবাসীরা এই মহামারীকালে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে তাদের দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন তাদেরও প্রশংসা করার অনুরোধ জানিয়েছি আমি। শেফার যেহেতু বিশ্ব ব্যাংকের এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, তাই আমি তাকে এই বিনীত অনুরোধ করেছি।”
গত ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর সারাবিশ্বে রেমিটেন্স কমবে ২০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে কমবে ২২ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। চলতি অক্টোবর মাসের ২১ দিনে (১ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর) তা ১৫১ কোটি ২০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফনের কারণে বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
“এছাড়া মহামারীর কঠিন এই সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি হবে বলেও বৈঠকে আনন্দের সঙ্গে উপস্থাপন করেছি আমি।”
কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তার একটি বর্ণনা বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন মুস্তফা কামাল।
ভবিষ্যতের প্রবাস শ্রমিকদের লক্ষ্য করে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ডলারের ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি কর্মসূচি’ শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক অন্যতম। এ পর্যন্ত সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের সবচেযে বড় আইডিএ কর্মসূচি চলছে, যার পরিমাণ ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।