ভোক্তা ঋণ বাড়াতে বড় ছাড়

গাড়ি, আসবাবপত্র বা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মত পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতে উৎসাহিত করতে ভোক্তা ঋণে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 05:22 PM
Updated : 20 Oct 2020, 05:22 PM

আগে এ ধরনের ঋণের বিপরীতে ব্যাংককে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হত; এখন ২ শতাংশ রাখলেই চলবে।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তাতে বলা হয়েছে, আবাসন ও পেশাদারদের ঋণ বাদে সব ধরনের অশ্রেণিকৃত ভোক্তা ঋণে এতদিন ৫ শতাংশ হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হত। তবে অশ্রেণিকৃত ক্রেডিট কার্ডে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ২ শতাংশ।

এখন ভোক্তা ঋণের চাহিদা মেটাতে এবং ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করতে সব ধরনের অশ্রেণিকৃত ভোক্তা ঋণে ২ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে। আর আবাসনে নিরাপত্তা সঞ্চিতি আগের মতই ১ শতাংশ থাকবে।

মূলত ব্যক্তিগত ঋণ, গাড়ি ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণ ভোক্তা ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব ঋণ দেওয়ার সময় ব্যাংকগুলোকে তাদের মুনাফা থেকে এই ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়।

বেসরকারি খাতের ব্যাংক ঋণের একটি অংশ এ ধরনের ভোক্তা ঋণ হিসেবে ভোগ ব্যয়ে চলে যাচ্ছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংক বছর দুই আগে এ ধরনের ঋণ দিতে নিরুৎসাহিত করে আসছিল।

এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দিলে ব্যাংকগুলোর ভোক্তা ঋণ দেওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। আর তাতে করে বিভিন্ন খাতের ব্যবসাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুদহার ৯ শতাংশ করায় ভোক্তা ঋণ দিতে গেলে এর মধ্যে ৫ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতিতেই চলে যেত। আমানতের খরচ ৫ শতাংশের সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালন খরচও থাকে। ফলে ভোক্তা ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য সেভাবে লাভজনক হচ্ছিল না।

এখন নিরাপত্তা সঞ্চিতি ২ শতাংশ করায় ৫ শতাংশ আমানতের খরচ বাদ দিয়েও ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারবে। মুনাফা খুব বেশি না হলেও খরচ উঠবে।

“এর ফলে ভোক্তা ঋণে আর ব্যাংকের লোকসান হবে না। গ্রাহকরা যেমন ঋণ পাবেন, তেমনি বিভিন্ন খাতের ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার বেশিরভাগই আসে আমানতকারীদের অর্থ থেকে। ব্যাংকে টাকা জমা রাখার জন্য আমানতকারীদের সুদ দিতে হয়।

আবার আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে, যার একটি হলো নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ।

ব্যাংকগুলোকে তাদের মুনাফা থেকে ওই টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ব্যাংকের মুনাফার তুলনায় প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বেশি হলে প্রথমে মূলধন থেকে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দেওয়া হয়। তাতেও প্রভিশন সংরক্ষণ না হলে তখন মূলধন ঘাটতি দেখাতে হয়।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে তখন প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।