রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা-উন্নয়নে ব্যয় বাড়ছে ৯৩০ কোটি টাকা

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর পাশাপাশি সামাজিক সেবা প্রদানে গৃহীত একটি প্রকল্পের ব্যয় ৯৩০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে, যার বড় অংশই দাতাদের থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2020, 02:43 PM
Updated : 6 Oct 2020, 02:43 PM

‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মাল্টি সেক্টর’ প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে এখন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সামাজিক সেবা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য এই প্রকল্পটি সংশোধন করে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

“রোহিঙ্গাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো, সামাজিক সেবা প্রদান ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।”

এই প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা শিবিরে সুপেয় পানি সরবরাহ, রাস্তা-ব্রিজ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হবে।

২০১৮ সালে জরুতি ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার  ৫৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ছিল ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।  এবার প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয় ৯৩০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় এক হাজার ৯৫৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, “এই বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ও জার্মানভিত্তিক দাতা সংস্থা কেএফডাব্লিউ অনুদান হিসেবে যোগান দিচ্ছে ৯১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হচ্ছে আরও ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।”

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ভেতরে ৫০টি সাইক্লোন শেল্টার, প্রায় ২২৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩৭১ মিটার সেতু নির্মাণ, ৪৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ এবং ৩৪টি মাল্টি পারপাস কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে।

এছাড়াও প্রকল্পটির আওতায় মিনি পাইপে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পটির মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও স্থানীয়দের চলাচলে প্রয়োজনীয় সড়ক মেরামত করা হবে। কারণ রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনসাধারণ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই তাদেরকেও সুবিধাভোগীর আওতায় আনা হয়েছে।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান জানান, বৈঠকে এই প্রকল্পসহ মোট ১ হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ের চারটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে এবং ৯১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল-

>> জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) প্রকল্প। এতে ব্যয় বেড়েছে ৩৪৯ কোটি ২২ লাখ টাকা।

>> চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং-৬২ (পতেঙ্গা), পোল্ডার নং- ৬৩/১ বি (আনোয়ারা এবং পটিয়া) পুনর্বাসন (২য় সংশোধনী) প্রকল্প। এতে ব্যয় বেড়েছে ২৫৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

>> হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণে মহিলাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে বিটাকের কার্যক্রম সম্প্রসারণপূর্বক আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন (ফেজ-২) প্রকল্প। এর ব্যয় ১২৩ কোটি টাকা।