মহামারীতে বেকারত্ব বাড়লেও এখন আগের অবস্থায় ফিরেছে: বিবিএস

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশে বেকারত্বের হার ২২ শতাংশের উপরে চলে গেলেও সেপ্টেম্বরে তা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2020, 01:46 PM
Updated : 6 Oct 2020, 01:58 PM

‘জীবিকার উপর ধারণা জরিপ ২০২০’ এ পাওয়া এই তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলেছে, মহামারীর আভিঘাত ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠছে বলে বাংলাদেশ।

ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়ার আগ পর্যন্ত দেশে বেকারত্বের হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

“কিন্তু করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এপ্রিল-জুলাই চার মাস লকডাউন থাকায় বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে ওই বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছে।”

এসময় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. ইয়ামিন চৌধূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম, কৃষি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ ও আর্থ সামাজিক অবকঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিবিএস গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের শ্রম বাজারের সার্বিক ধারণা পাওয়ার জন্য এই জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপের ফল দেখে মান্নান বলেন, দেশের শ্রম বাজার প্রায় আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী

এই শ্রম জরিপ একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, দ্বৈব চয়নের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে ৯৮৯ জন উত্তরাদাতার তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এবছরের মার্চ মাসের তুলনায় অগাস্ট মাসে খানাভিত্তিক মাসিক গড় আয় ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু এসময়ের মধ্যে ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে আনুমানিক ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ মার্চ মাসের তুলনায় কমিয়েছে। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আয় কমার কারণে কমিয়েছে বলে জানিয়েছে।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীতে ৬৮ দশমিক ৩৯ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ওই সময়ে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরিবার সহায়তা বা ত্রাণ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ সরকারি সহায়তা নিয়েছে।

যেসব পরিবার এসব সহায়তা নিয়েছে, মার্চ মাস পর্যন্ত তাদের গড় আয় ছিল ২০ হাজার টাকা বা তারও কম। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এই সহায়তা নিয়েছে।

মহামারীকালে কাজ হারিয়েছেন অনেক পোশাক শ্রমিক (ফাইল ছবি)

জরিপে উত্তরদাতাদের মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ কৃষিজীবি ছিলেন। এপ্রিল-জুলাই পর্যন্ত তা ৯ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এলেও সেপ্টেম্বর মাসে তা আবারও ১০ দশমিক ১৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ কৃষিজীবির সংখ্যা প্রায় স্থিতিশীল ছিল।

গত মার্চ পর্যন্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস সময়ে তা নেমে আসে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। তবে সেপ্টেম্বরে তা পুনরায় বেড়ে ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

একইভাবে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে দিনমজুরের সংখ্যা ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। এপ্রিল জুলাই সময়ে তা নেমে আসে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশে। তবে সেপ্টেম্বর তা আবারও ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বিটিআরসি ও দেশের চারটি মোবাইল অপারেটরের সহযোগিতায় দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

বিবিএস জানায়, দৈবচয়নের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৪০টি মোবাইল ফোন নম্বর নির্বাচন করে সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।