পাটকলগুলোতে উৎপাদন ফিরিয়ে আনা হবে: শ্রম প্রতিমন্ত্রী

উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোতে আবার উৎপাদন শুরু করা হবে বলে শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2020, 04:45 PM
Updated : 6 Oct 2020, 04:14 AM

এই সময়ের মধ্যে কারও ‘উসকানিতে’ বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী সোমবার সরকারি সিদ্ধান্তে সময়িক বন্ধ থাকা খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্নুজান সুফিয়ানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়নি। মূলত সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মিলগুলোকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা হবে। শ্রমিক ভাইয়েরা কারও উসকানিতে বিভ্রান্ত হবেন না।”

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সোনালী আঁশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা, পাট চাষীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহকে অবশ্যই চালু রাখবে সরকার। জিটুজি, পিপিপি অথবা লিজিং ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পাটকলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। মিলসমূহ চালু হলে দক্ষ শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে চাকুরি পাবেন।”

মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকার সুযোগে কেউ যেন যন্ত্রপাতি মিলের বাইরে নিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও শ্রমিকদের সতর্ক থাকার তাগিদ দেন তিনি।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

অবসরে পাঠানো শ্রমিকদের মোট পাওনার ৫০ শতাংশ তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে সঞ্চয়পত্র আকারে ।

মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, “অল্প দিনের মধ্যেই খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”

অবসায়নের আগে যেহেতু দুই মাসের নোটিশ দেওয়া হয়নি, সেহেতু ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের চলতি বছরের জুলাই ও অগাস্ট মাসের মজুরি ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে বলে বিজেএমসি জানিয়েছে।

ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় তার আগেই।

এসব পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর থেকে অবসরে যাওয়া ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছিল শুরুতে।

তবে মহামারী পরিস্থিতি এবং দীর্ঘ দিন বেতন বকেয়া থাকায় আর্থিক সঙ্কটে থাকা শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে তাদের পুরো পাওনা চলতি অর্থবছরে একসঙ্গে পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সে সময় বলা হয়েছিল, আপাতত বন্ধ রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় আধুনিকায়ন করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে চালু করা হবে। অবসরে পাঠানো শ্রমিকদেরও তখন আবার কাজের সুযোগ হবে।

আধুনিকায়নের পর বন্ধ পাটকলগুলো ফের চালু করার লক্ষ্যে মিল ও বিজেএমসির অন্যান্য সম্পত্তির ‘যথাযথ ব্যবহার’ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেই কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং বিজেএমসির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে প্রয়োজনীয় জনবলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে সরকার ইতোমধ্যে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুটি কমিটি গঠন করেছে।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। শ্রম অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইউসুফ আলী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম সানাউল্লাহ নান্নু, খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলের সিবিএ নেতারা।