মহামারীতে বিদেশে কর্মসংস্থানে ধস

চলতি বছরে বিদেশে সাড়ে সাত লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অগাস্ট পর্যন্ত আট মাসে মাত্র এক লাখ ৮১ হাজার ২৭৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2020, 12:02 PM
Updated : 28 Sept 2020, 01:27 PM

মহামারীর মধ্যে বিদেশে চাকরির বাজার কতটা সঙ্কুচিত হয়েছে সোমবার তা মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সেখানেই এ তথ্য এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এই ভার্চুয়াল বৈঠকে মহামারীকালে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৯ সালে সাত লাখ এক হাজার জনের বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত পাঠানো গিয়েছিল সাত লাখ ১৫৯ জনকে।

“২০২০ সালে বিদেশে কর্মসংস্থানের টার্গেট ছিল সাড়ে সাত লাখ। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে গত জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত এক লাখ ৮১ হাজার ২৭৩ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।”

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত চার লাখ ছয় হাজার ৯৬২ জন বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। সে হিসেবে এবার বিদেশে কর্মসংস্থান ৫৫ শতাংশ কমেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ ৪১ হাজার ৩৬ জন কর্মী দেশে এসেছেন জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, এর মধ্যে ২৮ হাজার ৫৮৬ জন ট্র্যাভেল পাস নিয়ে ফেরত এসেছেন। তারা যাতে আবারও ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রায় এক কোটি বংলাদেশি দেশের বাইরে থাকেন বা বিদেশে কাজ করেন বলে তথ্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, ২৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউনের মধ্যে পাঁচ হাজার ৯৭৪ জন বিদেশ থেকে ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

এই সঙ্কটেও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ১৮ দশমিক ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, টাকার এই অংক আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

“আমরা কোভিড-১৯ কারণে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম, কিন্তু এটা অনেক বেশি হয়ে গেছে, এটা একটা ভালো দিক।”

কুয়েতে চাকরিতরত প্রবাসীদের আকামা শেষ হওয়ায় সোমবার প্রায় আড়াইশ জন দেশে ফিরেছেন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আনোয়ারুল বলেন, সৌদি আবর প্রবাসীদের ফিরে যাওয়া নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিসভাকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

“সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন, উনারা আশ্বাস দিয়েছেন আকামার (ওয়ার্ক পারমিট) মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে, যাতে সবাই যেতে পারে।

“পাশাপাশি আকামা পরিবর্তন করার একটা ব্যবস্থা করার রিকোয়েস্ট করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ অনেক দেশ থেকে অনেক উদ্যোক্ত চলে গেছেন। যেখানে চাকরি করত, সেখান থেকে যেন উনারা অন্য কোথাও যেতে পারেন। কারণ আমাদের বেশিরভাগ লোকই বেসরকারি সেক্টরে চাকরি করেন।”

সৌদি আরব যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরো বেশি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেয়, সে বিষয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থান এবং যারা বিদেশে গেছেন তাদের কীভাবে আরও ভালোভাবে কাজের সুযোগ করে দেওয়া যায় বা কীভাবে আরো দেশে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করা যায় সেসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে সোমবার বিদেশ থেকে ফেরত স্বজনদের অপেক্ষায় তাদের পরিবার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

অষ্টম পর্বে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি

ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির অষ্টম পর্বে সম্প্রসারণের প্রস্তার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মোট সাত পর্বে ৩৭ জেলার ১২৮টি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে দুই লাখ ৩০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরমধ্যে দুই লাখ ২৮ হাজার ১২৯ জনকে অস্থায়ী কর্মে নিয়োজিত করা হয়েছিল।

নতুন করে অষ্টম পর্বে এই কর্সসূচি সম্প্রসারণে ৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

২০১০ সালের ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কুড়িগ্রাম থেকে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি উদ্বোধন করেছিলেন।