ভূমির শ্রেণিবিভাজনে ৩৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প আসছে

দেশের পুরো জমিকে অবস্থান ও গুণাগুনের ভিত্তিতে কৃষি, আবাসন, বাণিজ্য পর্যটন এবং শিল্প প্লট হিসেবে শেণিবিভাজন করতে ৩৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার।  

জাফর আহমেদজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2020, 10:13 AM
Updated : 28 Sept 2020, 10:13 AM

‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ, ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সারা দেশের ভূমিকে ডিজিটাল করার জন্য এখন একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পটির সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন এই প্রকল্পটির মাধ্যমে সারা দেশের ভূমিকে মৌজা ও বিভিন্ন প্লট ভিত্তিক আলাদা করা হবে।

“তখন যে কেউ যেখানে সেখানে যা ইচ্ছা নির্মাণ করতে পারবে না। পরিকল্পিতভাবে ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত হবে। প্রতিবেশী ভারত তাদের ভূমিকে এধরণের জোনিং করে প্লটভিত্তিক ভাগ করে ব্যবহার করছে।“

একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য তৈরি প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পর মুল কাজ হবে ভূমির গুণাগুণ অনুযায়ী ভূমিকে প্লটওয়ারি কৃষি, আবাসন, বাণিজ্যিক, পর্যটন ও শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং ম্যাপ ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

প্রকল্পটির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু ভুমি ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে সারাদেশে মৌজা ও প্লট ভিত্তিক ডে টাবেজ প্রণয়ণ করা হবে।

এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় ভূমির অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার প্রচারণা চালানো হবে।

প্রকল্পটির আওতায় ভূমি জোনিং বিষয়ক কার্যক্রম সচল রাখার জন্য ভূমি ন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক ইউনিট গঠন করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সামাগ্রিক উন্নয়নের জন্য দেশের ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি দক্ষ পদ্ধতি গড়ে তোলা দরকার। দেশের ভূমি হস্তান্তর ও ভূমি ব্যবহার শ্রেণি পরিবর্তনের হার অনেক বেশি।

এতে বলা হয়, দেশে এখন কৃষি জমির পরিমাণ মোট জমির প্রায় ৮৪ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে নতুন আবাসন রাস্তা ঘাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অবকাঠামো ইত্যাদি নির্মানের জন্য কৃষি জমি ব্যবহার হওয়ার ফলে কৃষি জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভূমি ব্যবহার নীতি ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালায় দেশের সকল ভূমিকে বিভ্ন্নি অঞ্চলে ভাগ করে ভূমি পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

ভূমি ব্যবহার নীতি ২০০১ বাস্তবায়নে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৬ থেকে ২০১১ মেয়াদে উপকুলীয় ভূমি জোনিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।যার মাধ্যমে ১৫২টি উপকুলীয় উজেলার ভূমি জোনিং ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা (ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান) প্রণয় করা হয়েছে। এছাড়া ২০১২-২০১৭ মেয়াদে বাস্তবায়িত জাতীয় ভূমি জোনিং (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩৩৬টি উপজেলায় ভূমি জোনিং এবং ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও ম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।

জাতীয় ভূমি জোনিং (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় উপজেলা, জেলা এবং বিভাগ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালাগুলোতে উপকারীতা কার্যকারিতা এবং প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার ওপর ব্যাপক আলোচনা করা হয়।

উক্ত আলোচনায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ভূমি জোনিংয়ের বিষয়টি এবং কৃষিজমির সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে এটির মৌজা ও প্লট ভিত্তিক ভাগ করা প্রয়োজন।

মৌজা ও প্লট ভিত্তিক ডিজিটাইজপ ভূমি জোনিং মানচিত্র প্রণয়ন পূর্বক ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হবে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে প্লট নাম্বার এবং প্লট ভিত্তিক বিস্তারিত ইত্যাদি ভূমি জোনিং মানচিত্রে সন্নিবেশিত করা হবে।বিধায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভুমি প্রশাসনের দায়িত্ববপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ এই তথ্য ব্যবহার করে অপ্রতুল ভূমি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে দেশের ভূমি সম্পদ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।