অর্থবছরের আড়াই মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় গুণ বেশি।
মহামারীর প্রভাবে গত এপ্রিলে রেমিটেন্স কমলেও তারপর থেকে রেমিটেন্সে চলছে ঊধ্বগতির ধারা। কোরবানির ঈদের পর রেমিটেন্স কমবে বলে ধারণা করা হলেও তা বরং বাড়ছেই।
কেন্দ্রীয়ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে প্রায় ১৪৩ কোটি ৪৪ লাখ (১.৪৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের পুরো মাসের প্রায় সমান। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে ৭৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।
সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আড়াই মাসেই (১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর) ৫৯৯ কোটি ৬৬ লাখ (৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৯ শতাংশ বেশি।
মহামারীকালে আড়াই মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মহামারীর মধ্যেও আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন। এতে আমরা সাহস পাচ্ছি।”
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল মাসের হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ধারণা করা হচ্ছিল, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কষ্টের মধ্যেও ঈদের সময় স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন, আর অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বলে জমানো অর্থ আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে রেমিটেন্স বাড়ছে।
কিন্তু অগাস্টের শুরুতে কোরবানির ঈদের পরও রেমিটেন্সের গতি থামেনি। পুরো মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল বাংলাদেশে, যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
রেমিটেন্স বাড়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে হুন্ডি বন্ধ এবং সরকারের দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনাকে দেখা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “রেমিটেন্স আরও বাড়বে। কারণ সরকার এ ক্ষেত্রে প্রণোদনার মাধ্যমে পাঠানোর খরচ দিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া রেমিটেন্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।”
রেমিটেন্সের উচ্চ হার মহামারী মোকাবেলা করা দেশের জন্য সহজ হচ্ছে বলে জানান মুস্তফা কামাল।
“এই রেমিটেন্সে দেশে লাখ লাখ পরিবার চলছে। ছোট ছোট ব্যবসা হচ্ছে।”
রিজার্ভ ফের ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
রেমিটেন্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বেড়ে যাওয়ার কথাও বলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
“মূলত রেমিটেন্সের উপর ভর করেই আমাদের রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড হচ্ছে। এই তো কয়েক দিন আগে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে গিয়েছিল। রোববার তা ফের ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।”
ডিসেম্বরের মধ্যেই এই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে তা ৫০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী।