রেমিটেন্সে আরও গতি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঈদের পর রেমিটেন্স ধীরে ধীরে কমবে বলে ধারণা করা হলেও তা বরং বেড়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2020, 04:26 PM
Updated : 13 Sept 2020, 04:26 PM

চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১০ দিনেই প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ। তার আগে জুনে মাসে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

করোনাভাইরাস মহামারীর আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত এপ্রিল মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। এরপর থেকে রেমিটেন্স বাড়ছে।

ধারণা করা হচ্ছিল, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কষ্টের মধ্যেও ঈদের সময় স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন, আর অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বলে জমানো অর্থ আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে রেমিটেন্স বাড়ছে।

কিন্তু অগাস্টের শুরুতে কোরবানির ঈদের পরও রেমিটেন্সের গতি থামেনি। পুরো মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে।

আর সেপ্টেম্বর মাসের শুরু ধারা দেখে রেমিটেন্সে নতুন রেকর্ডের আশায় আছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে রেমিটেন্সের এই ঊর্ধ্বগতি সত্যিই অবাক করার মতো!

“এর আগে দেখা গেছে, দুই ঈদকে সামনে রেখে বেশি রেমিটেন্স পাঠাতেন আমাদের প্রবাসীরা। এখন এই কঠিন সময়েও বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন তারা, মহামারীর মোকাবেলায় অবদান রাখছেন। তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি; কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে (১ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর) ৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত বছরের এই ১০ দিনে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত অগাস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে এসেছিল ৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগের মাস জুলাইয়ের ১০ দিনে এসেছিল ৭৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

গত জুলাই মাসেই রেমিটেন্সে রেকর্ড হয়েছিল। সেপ্টেম্বরের শুরুর ১০ দিনে রেমিটেন্স এসেছে জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনের চেয়ে বেশি।

এই রেমিটেন্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “এই মহামারীকালেই রেমিটেন্সে একটার পর একটা রেকর্ড হয়েছে। আর এর উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভেও রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।”

আ হ ম মুস্তাফা কামাল

রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তার প্রভাবই পড়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

“আশা করছি এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে,” বলেন তিনি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

রিজার্ভ ৩৮.৫ বিলিয়ন ডলার

গত ১ সেপ্টেম্বর অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে তা আরও বেড়ে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

এরপর ৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-অগাস্ট মাসের ১ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৯ বিলিরয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

রোববার দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৮ দশমিক ৫ বিলিরয়ন ডলার।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।