উন্নত দেশের কাতারে যেতে ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা

মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে উন্নত দেশ উন্নীত করতে ২০ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2020, 01:53 PM
Updated : 10 Sept 2020, 01:53 PM

‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ শীর্ষক দীর্ঘ মেয়াদী এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে তোলা।

এর আগে ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করছে সরকার। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ হওয়ার পর নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) তত্ত্বাবধানে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১- ২০৪১’ জন অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

সভায় মূল প্রবন্ধে জিইডি সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিতে হবে। যেখানে মাথাপিছু আয় হবে বর্তমান মূল্যে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি। দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে ৩ শতাংশে। চরম দারিদ্র্যের হার হবে ১ শতাংশ। গ্রাম-শহরের বৈষম্য কমবে। ৮০ শতাংশ মানুষ শহুরে জীবনযাপনের সুযোগ পাবে। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

অধ্যাপক শামসুল বলেন, এই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। সে হিসাবে আগামী বছর থেকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এভাবে চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার চুড়ান্ত বাস্তবায়ন রুপ পাবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪১ সাল নাগাদ রাজস্ব আহরণ জিডিপির ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। সরকারি ব্যয় হবে ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। মোট জাতীয় সঞ্চয় হবে ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

তখন রপ্তানি হবে মোট জিডিপির ১১ শতাংশ আর আমদানি হবে ১০ শতাংশ। রেমিটেন্স আহরণের লক্ষ্য হচ্ছে ২ শতাংশ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশজ আয়ে কৃষি খাতের অবদান হবে ৫ শতাংশ। শিল্প খাতের অবদান হবে ৩৩ শতাংশ এবং সেবা খাতের অবদান হবে ৬২ শতাংশ।

উচ্চ আয়ের অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সঠিক ও সচল রাখতে কয়েকটি নীতিমালা ও কৌশল স্থাপন করা হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ। আর ভবিষ্যৎ হচ্ছে অনিশ্চিত। তাই ভবিষ্যৎকে নিশ্চিত করার জন্যই আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকি।”

তিনি বলেন, “উন্নয়ন করতে হলে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করতে হবে। গত ১০ বছরে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল বলেই দেশে উন্নয়ন হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে পরিকল্পনা দিয়ে এগোয়নি।”

আহমদ কায়কাউস বলেন, “বর্তমান সরকারের অতীতের ও বর্তমান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বেশিরভাগই উন্নয়ন হয়েছে।”

দেশের গবেষণা সংস্থাগুলোর বেশির ভাগ সরকারের সমালোচনা পছন্দ করেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।