ছোট ঋণ বিতরণের সময় বাড়ল

মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে সরকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তা থেকে ঋণ পাওয়ার সময় দুই মাস বাড়ানো হয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2020, 10:37 AM
Updated : 4 Sept 2020, 10:37 AM

এখন অক্টোবর পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। আগে বড়-ছোট সব উদ্যোক্তাদের জন্য অগাস্ট পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণের সময় আরও দুই মাস বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করেছে।

বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত ৩৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণের পুরোটা অগাস্ট মাসের মধ্যেই বিতরণ শেষ করে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু এই সময় পর্যন্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলো আসলে এতোদিন বড় ঋণ বিতরণেই বেশি ব্যস্ত ছিল। সে কারণে ছোট ঋণের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারেনি। ব্যাংকগুলো কিছু বিষয়ে আবেদনও করেছিল। তাদের আবেদন অনুযায়ী ছোট ঋণের ঝুঁকির দায়িত্বও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া এ ঋণের নীতিমালার আরও কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

“সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঋণ বিতরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে।”

সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সিএমএসএমই খাতের জন্য বিশেষ ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা’ শীর্ষক বৃহস্পতিবারের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় তাদের জন্য নির্ধারিত বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অর্জন নিশ্চিত করতে হবে।

সার্কুলারে এই প্যাকেজের ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রাম ও শহরের জন্য যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তা রহিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সার্কুলারে বলা হয়, গত ১৩ এপ্রিল এই প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, বাৎসরিক মোট ঋণের নুন্যতম ১৫ শতাংশ গ্রাম অঞ্চলে চলতি মূলধন ঋণ প্রদান করতে হবে। এই ঋণ বিতরণের জন্য বৎসর ভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ না করে অতি দ্রুততার সাথে ঋণ বিতরণ করা গেলে সিএমএসএমই খাতে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান পুনরায় উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে। এতে করে উৎপাদন ও কাঙ্খিত কর্মসংস্থান বহাল রাখা সম্ভবপর হবে।

“সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এখন এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আলোচ্য প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০ হাজার কোটি টাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রাম ও শহরের জন্য নির্দিষ্টকৃত লক্ষ্যমাত্রা এতদ্বারা রহিত করা হলো।”

সার্কুলারে আরও বলা হয়, ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম সহজ ও গ্রাহকবান্ধক করার উদ্দেশ্যে আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের জন্য কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে বিতরণ করা চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ইএমআই (Equal Monthly Installment) ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে । তবে ঋণের প্রকৃতি, সময়কাল (১ বছর) ও নির্ধারিত মঞ্জুরী সীমা অপরিবর্তিত থাকবে।

এই প্যাকেজের ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেষ ফজলে ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানা অজুহাতে ব্যাংকগুলো ছোট ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখায় না। অথচ এই ঋণ খেলাপি হওয়ার নজির খুবই কম। তারপরও ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কেন ঋণ দিতে চায় না বুঝতে পারি না।

“সময় বাড়ানোর পর এ প্যাকেজের পুরো ঋণ আদায় হবে বলে আমি আশা করছি। তবে, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব সময় কড়া নজরদারি করতে হবে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চাহিদা বিবেচনায় ব্যাংকগুলো প্রথমে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতার অর্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে বড় শিল্পে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

“এখন সিএমএসএমইসহ সব ধরনের ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। গ্রাহকপ্রতি ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যেই ছোট ঋণ বিতরণেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হবে।”