রপ্তানি আয় আরও বেড়েছে

করোনাভাইরাস মহামারীতে তলানিতে নেমে যাওয়া রপ্তানি আয় আরও বেড়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 06:23 PM
Updated : 3 Sept 2020, 06:23 PM

সদ্য সমাপ্ত অগাস্ট মাসে ২৯৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত বছরের অগাস্ট মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। তবে গত অগাস্টে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ।

গত অগাস্টে রপ্তানি আয় লক্ষ্যের চেয়ে কমলেও জুলাই-অগাস্ট মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এই অঙ্ক লক্ষ্যের চেয়ে বেশি।

জুলাই-অগাস্ট মিলিয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। অর্থাৎ এই দুই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে যে আয় হয়েছে; গত বছরের জুলাই-অগাস্ট সময়েও একই আয় হয়েছিল। তবে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সচল ঢাকার মিরপুরের একটি পোশাক কারখানা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

জুলাই-অগাস্ট সময়ে এই খাত থেকে ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ৫৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।

জুলাই-অগাস্ট সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে উভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন আমাদের মোট ক্যাপাসিটির ৬০-৭০ শতাংশ উৎপাদন করছি। অর্ডার আসছে, তবে কম। এখন বেসিক আইটেমের (অতি প্রয়োজনীয়) পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বেশি। সে কারণেই নিটে প্রবৃদ্ধি হয়েছে; উভেনে কমেছে।”

তিনি বলেন, প্রতিবছরই অগাস্ট-সেপ্টেম্বর মাসটা খারাপ যায়। মহামারীর মধ্যেও এই দুই মাসে গত বছরের একই সময়ের সমান রপ্তানি হয়েছে, এটা খুবই ‘ভালো লক্ষণ’। ডিসেম্বরের বড়দিনকে সামনে রেখে অক্টোবর থেকে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের ভরা মৌসুম শুরু হয়।

“বড় বড় ফ্যাশন হাউজগুলো খুলতে শুরু করেছে। বায়ারদের কাছ থেকে আমরা যতটুকু আভাস পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে ডিসেম্বরে বড় দিনকে ঘিরে বিশ্ববাজারে পোশাক কেনাবেচা বাড়বে। আমাদের রপ্তানিও ঘুরে দাঁড়াবে।”

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যতটা ভয় পেয়েছিলাম, তা এই দুই মাসে কেটে গেছে। এখন আমরা সাহস পাচ্ছি।

“শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, তাতে আমাদের অনেক উপর হয়েছে। সবমিলিয়ে ছয় মাস-এক বছরের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব বলে আশা করছি।”

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছিল।

বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ে, জুনে তার চেয়ে অনেক বাড়ে।

এরপর নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি করে দেশ যে আয় করেছে, তা গত অর্থ বছরের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি।

ইপিবি’র তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে পণ্য রপ্তানি করে ৬৮১ কোটি ডলার আয় করার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। আয় হয়েছে ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে আয় হয়েছিল ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ডলার।  

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল এই দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

জুলাই মাসের ওই মধ্য দিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করে গত মার্চ মাস

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মহামারীর মধ্যেও রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে একটি বিষয় কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখতে হবে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু আমাদের রপ্তানি আয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল। প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি কমছিল।

“দুই মাসে ২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মহামারীর সময় প্রবৃদ্ধি থাকাই বড় বিষয়।”

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-অগাস্ট সময়ে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

অর্থাৎ মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে।

এই দুই মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩১১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। আর উভেন থেকে আয় হয়েছে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

পাটের তৈরি এসব পণ্য রপ্তানিও হয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

এই সঙ্কটেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির বড় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

জুলাই-অগাস্ট সময়ে ১৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১ শতাংশের মতো।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছে, যা ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

মহামারীকালে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।

তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০) মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ছিল ২৬ শতাংশ।