বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি পেট্রোবাংলাকে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া পেট্রোলিয়ামের কাছ থেকে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রথম দফার এই ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী ভিটল এশিয়া একটি কার্গোতে করে ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ২০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি বাংলাদেশে পাঠাবে, যার বাজারমূল্য ১৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৭৮ টাকা। সভায় এই ক্রয় প্রস্তাবই অনুমোদন করা হয়।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে সিঙ্গাপুরের ওই কোম্পানির এলএনজিবাহী কার্গো বাংলাদেশ উপকূলে চলে আসবে বলে জানিয়েছ জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
২০১৮ সালের অগাস্ট মাস থেকে বাংলাদেশের মহেশখালী উপকূলে স্থাপিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে কাতারের রেসগ্যাস থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার।
১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী রেসগ্যাস প্রতি বছর ন্যূনতম ১.৮ মিলিয়ন থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ করবে।
বিশ্ব বাজারে তেলের দামের সঙ্গে সংযোগ রেখে করা ওই চুক্তিতে কাতারের এলএনজির দাম বিভিন্ন সূচক অনুযায়ী উঠানাম করতে পারে।
এক হাজার এমএমসিএফডি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি এফএসআরইউ বা ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে দেশের চাহিদা অনুযায়ী ৬৫০ থেকে ৭০০ এমএমসিএফডি এলএনজি গ্রহণ করছে পেট্রোবাংলা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড বা আরপিজিসিএল এর হিসাবে গত বছরের ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল হয়ে এক লাখ ২৬ হাজার ৩৪৬ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। আর পরবর্তীতে স্থাপিত সামিট এফএসআরইউ হয়ে এসেছে ২২ হাজার ২৯৪ এমএমসিএফ এলএনজি।
আরপিজিসিএল এর এলএনজি শাখার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কাতারের রেসগ্যাস এলএনজির নির্ধারিত কোনো মূল্য ঠিক করা হয়নি। তবে সেখানে কিছু প্যারামিটার ঠিক করা আছে যার ফলে এলনএনজির দামে একটা ‘উইন উইন’ পরিস্থিতি বজায় থাকে।
সিঙ্গাপুরি কোম্পানির কাছ থেকে কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের পর জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এখন সেটা বাস্তবতার মুখ দেখলো।
“এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এখনই যে আমরা লাভবান হবো তা নয়; তবে বিকল্প একটা ক্রয়ের রাস্তা তৈরি হল।”
তিনি বলেন, “খোলা বাজার যে এলএনজি কেনা হচ্ছে, তার প্রতি এমএমবিটিইউর দাম হয়ত চার ডলারের কিছু কম পড়েছ। কিন্তু এখানে তাৎপর্য হচ্ছে আমরা এলএনজির একটা বিকল্প বাজারে প্রবেশ করলাম, যাতে বিশ্ব বাজারে দাম কমলে তার একটা সুযোগ আমরা নিতে পারব। এতদিন এই সুযোগটুকু আমাদের ছিল না।”
দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ৩৬শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্র থেকে সর্বোচ্চ ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির পথ বেছে নিয়েছে সরকার।
প্রাকৃতিক গ্যাসকে শীতলীকরণের মাধ্যমে যখন তরলে পরিণত করা হয়, তখন তাকে এলএনজি বলে।