রেমিটেন্স বেড়েছে দুই কারণে: অর্থমন্ত্রী

বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর ঝামেলা ‘কমায়’ এবং প্রণোদনা দেওয়ায় মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বেড়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 04:05 PM
Updated : 2 Sept 2020, 04:05 PM

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলেন এ বিষয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

রেমিটেন্স নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “চলতি বছরের জুলাই এবং অগাস্ট মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ। গত বছর ছিল রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে হাইয়েস্ট আর্নিং বছর। গত বছর ১৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। গত বছরের তুলায় ৫০ ভাগ বৃদ্ধি এটা অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত অগাস্ট মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর গত বছরের একই মাসে এসেছিল ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে এতো বেশি রেমিটেন্স আসেনি।

জুলাই ও অগাস্ট মাস মিলিয়ে দেশে এসেছে ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলাম, তখন আমি নিজ উদ্যোগে একটা স্টাডি করেছিলাম। তাতে দেখা যায়, ৫১ শতাংশ রেমিটেন্স আসে বৈধ পথে, আর ৪৯ শতাংশ আসে অবৈধ বা হুন্ডির মাধ্যমে। আমি তখন থেকেই ভাবতে শুরু করলাম যে শতভাগ রেমিটেন্স বৈধ পথে আনতে হবে।”

সেজন্য দুটো কাজ করার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “একটি হচ্ছে রেমিটেন্সে প্রণোদনা শুরু করলাম। রেমিটেন্স বাড়ার বিষয়ে এ প্রণোদনা কাজ করেছে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আগে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোটা ছিল অনেক জটিল। অনেক ফর্ম এবং নানাবিধ প্রশ্ন করা হত, এখন এগুলো সহজ করে দিয়েছি।

“গত এক বছর যাদের রেমিটেন্স এসেছে কাউকে প্রশ্ন করা হয়নি। কারো টাকা মার যায়নি। আমি মনে করি, সে জন্যই এত রেমিটেন্স রেড়েছে।”

প্রবাসীদের বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোনো না কোনোভাবে এর সুফল আপনারা পাবেন।”

করোনাভাইরাস সঙ্কটে থমকে যাওয়া দেশের অর্থনীত আবার সচল হতে শুরু করেছে কিনা- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি সব সময় একটি বিষয়ে বিশ্বাস করি, সেটা হলো আমার এই নাই, সেই নাই- এ থেকে আমি কিছু অর্জন করতে পারব না। আমি মনে করি আমাদের আছে এবং তা কাজে লাগাতে হবে। এই আছেটাকেই কাজে লাগাচ্ছি। আমাদের ডমিস্টিক রির্সোর্স অনেক বেশি।“

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

এর মধ্য দিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রপ্তানি আয়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “গত দুই মাসে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন রেমিটেন্স যেভাবে উপরের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এক ঐতিহাসিক রেকর্ড সৃষ্টি হবে জুলাই অগাস্টের রপ্তানি বাণিজ্যে। সব ক্ষেত্রেই আমরা ভালোটা পাচ্ছি। আমি মনে করি এটা অব্যাহত থাকবে। এ দেশের মানুষ আমাদের প্রাণশক্তি, তাদের কারণেই সব সম্ভব হবে। তারা ব্যবসা বাণিজ্য করছেন তার ফল তারা পাচ্ছেন।”

মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হলেও এসএমই খাতের উদ্যেক্তারা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আসছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যাদের অ্যাকাউন্ট নেই, তাদের আমরা স্বীকার করি না বা করতে পারি না। এর ফলে যার টাকা পাওয়ার কথা, তার হাতে গিয়ে টাকা পৌঁছায় না। আমরা এগুলো দূর করতে চাই।”

“আমি বলব, যাদের অ্যাক্যাউন্ট আছে এবং তারা কী ব্যবসা করে এটা যদি তারা প্রমাণ করে, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা তাদের যতটা সহায়তার দরকার করব। তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা উইং আছে।”