এক ঋণের অর্থে অন্য ঋণ পরিশোধ নয়

ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 02:04 PM
Updated : 2 Sept 2020, 02:04 PM

বুধবার এক সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, কোনোভাবেই এক ঋণের অর্থ দিয়ে অন্য কোনো ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, অনেকে সেখান থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে কোভিড-১৯ এর ক্ষতি সামলে উঠতে ব্যয় না করে আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছে বলে অভিযোগ আসার পর এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায়, ঋণের যথাযথ ব্যবহার। যে ঋণই নেওয়া হোক না কেন, সেটা যেন সেই কাজেই ব্যবহত হয়; অন্য কোথাও ব্যবহার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই এই সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।

“শুধু প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ নয়, নতুন দেওয়া অন্য সব ঋণও যাতে যথাযথভাবে ব্যবহত হয় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।”

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ কম হওয়ার কারণে অনেকে তা নিচ্ছে। তবে বড় ব্যবসায়ীরা ঋণ নিলেও এসএমই খাত এখনও ঋণবঞ্চিত। এর ফলে দেশের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা খাতটি সমস্যায় পড়েছে। নয় শতাংশ সুদে ঋণের খরচ না ওঠায় ব্যাংকগুলো এদিকে আগ্রহ পাচ্ছে না।

“তাহলে দেখা যাচ্ছে, বড় বড় উদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে যথাযথ ব্যবহার করছে না। আগের নেওয়া বেশি সুদের ঋণ পরিশোধ করছে অথবা সমন্বয় করছে। সে কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এটা করতে হয়েছে। সরকার যে কাজে সহায়তার জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে, সে কাজে ব্যবহার না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।”

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকার, শিল্প ও সেবা খাতের জন্য। ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ছিল ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য। পরে শিল্প ও সেবাখাতের প্যাকেজের অঙ্ক তিন হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়।

এই দুই প্যাকেজের অর্থের অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ হাজার এবং ১০ হাজার- মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে।

দুই প্যাকেজেরই ঋণের সুদের হার নয় শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ চার দশমিক পাঁচ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সুদের বাকিটা সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

বড় শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল গঠন করা হয়েছিল তার পরিমাণ আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করে ওই তহবিল থেকে জুলাই মাসের বেতন দেওয়ার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে মালিকদের সাড়ে চার শতাংশ সুদ দিতে হয়েছে।

গত ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত ৩৩ হাজার কোটি টাকার বড় ঋণের মধ্যে ২০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ বিতরণ হয়েছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো বুধবারের সার্কুলারে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গাইডলাইন অন ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) ফর ব্যাংকস’ এর নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক গ্রাহককে যে উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে/হবে সে উদ্দেশ্যেই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ এক সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

“এছাড়া ২০১৮ সালের ৫ জুন জারি করা অপর এক সার্কুলারের মাধ্যমে কিস্তিভিত্তিক প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কিস্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কিস্তি ছাড়করণের জন্য এবং কোনো ঋণের অর্থ মঞ্জুরীপত্রে বর্ণিত খাতের পরিবর্তে অন্যত্র ব্যবহৃত হলে ব্যাংককে তার কারণ উদঘাটনসহ তা রোধকল্পে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গ্রাহকের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ দ্বারা গ্রাহকের বিদ্যমান অন্য কোনো ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ঋণ শৃংখলার পরিপন্থী।”

সার্কুলারে বলা হয়েছে, “‘গাইডলাইন অন ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) ফর ব্যাংকস’ এর যথাযথ পরিপালন নিশ্চিতকল্পে এ মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা যাচ্ছে যে, একটি ঋণের অর্থ দিয়ে কোনভাবেই অপর কোন ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না।”

নতুন সার্কুলারে ব্যাংকের আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পরিবীক্ষণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।