বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রো ফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) যৌথভাবে চালানো জরিপে পোশাক শিল্পে মহামারীর প্রভাব কাটার এই চিত্র দেখা যায়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সানেম জানায়, পোশাক শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার উপর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মূল্যায়ন করতে গত ১৫ সপ্তাহ ধরে ১ হাজার ৩৬৭ জন শ্রমিকদের উপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা এই জরিপের আওতায় ছিলেন, যার তিন-চতুর্থাংশ নারী।
এটি পুরো পোশাক খাতের প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র বলে দাবি করেছে সানেম।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের অন্য উপার্জনকারীদের ৯৬ শতাংশ জুলাই মাসে কাজে গেছেন। জুনে এটি ছিল ৯৪ শতাংশ।
নারী-পুরুষের মধ্যে এক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি বলে সানেম জানিয়েছে।
পরিবারের অন্য উপার্জনকারীরা এ সময়ে (মাসে) গড়ে ২৩৯ ঘণ্টা কাজ করেছেন বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন। জুন মাসে এটি ছিল ২৩৪ ঘণ্টা। অর্থাৎ কর্মঘণ্টা বেড়েছে।
এক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাইয়ে সাক্ষাৎকারদানকারী পরিবারের অন্য উপার্জনকারীদের গড় আয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ৯ হাজার টাকা।
এদের মধ্যে নারীদের গড় আয় ১০ হাজার টাকা আর পুরুষদের গড় আয় ৯ হাজার টাকা।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারে বাকি উপার্জনকারীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ পোশাক শিল্পে কাজ করেন। জুনে এটি ছিলো ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই মাসে আগের মাসের তুলনায় বেকারত্ব কমেছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, পরিবারের বাড়তি উপার্জনকারী নারীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ পোশাক খাতে কাজ করেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ৪২ শতাংশ।
সানেম জানায়, সর্বশেষ সংগৃহীত উপাত্ত থেকে দেখা গেছে যে জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে শতকরা ৩৪ শতাংশ তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ ও পুরুষদের মধ্যে ৬০ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারাই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ।
অন্যদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ জানিয়েছেন যে তাদের পরিবারে তারা ছাড়াও আরও অন্তত একজন উপার্জনকারী রয়েছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭১ শতাংশ শ্রমিকের স্বামী বা স্ত্রী উপার্জন করেন। ৭৩ শতাংশ নারীর স্বামী এবং ৫৭ শতাংশ পুরুষের স্ত্রী উপার্জন করেন।
সানেম এবং এমএফও-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই জরিপগুলো ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশ।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সরকারি নীতি, শ্রমিকদের দাবি দাওয়া আদায় এবং কারখানা ও ব্র্যাণ্ডের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করা।
এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৬ সালে, আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের উদ্যোগে; বাংলাদেশ, ভারত ও কম্বোডিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে।