প্রাকজাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের শর্ত আরও শিথিল

করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে রপ্তানিকারকদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে প্রাকজাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম) করেছিল, সেখান থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত আরও শিথিল করা হয়েছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2020, 12:36 PM
Updated : 24 August 2020, 12:36 PM

এখন এই ঋণ পেতে আগের মত অত বেশি দলিলপত্র দিতে হবে না। সহজে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি দলিল দেখিয়েই ঋণ পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে সোমবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলা করে রপ্তানি খাত যাতে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য এ সংক্রান্ত নীতিমালা শিথিল করে রপ্তানিকারকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আগের নীতিমালা অনুযায়ী এই ঋণ পেতে আবেদনের সঙ্গে ৯ ধরনের দলিলপত্র জমা দিতে হত। এর মধ্যে ছিল- ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত সনদ বা মঞ্জুরিপত্র, ঋণ বিতরণের বিবরণী, সুদসহ মূল অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকারপত্র, রপ্তানি আদেশের কপি, ঋণপত্রের কমার্শিয়াল ইনভয়েস, বিল অব ল্যান্ডিং, এয়ারওয়ে বিল বা কার্গো রিসিপ্ট, বিল অব এক্সপোর্ট এবং রপ্তানি পণ্য তৈরি সম্পন্ন করার প্রত্যয়নপত্র।

নতুন নিয়মে এই ঋণ পেতে চার ধরনের দলিলপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত সনদ বা মঞ্জুরিপত্র, ঋণ বিতরণের বিবরণী, সুদসহ মূল অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকারপত্র এবং রপ্তানি আদেশের কপি।

আগের মত এখন আর ঋণপত্রের কমার্শিয়াল ইনভয়েস, বিল অব ল্যান্ডিং, এয়ারওয়ে বিল বা কার্গো রিসিপ্ট, বিল অব এক্সপোর্ট ও রপ্তানি পণ্য তৈরি সম্পন্ন করার প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নয় ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানিকারকদের এই ছাড়ে দেওয়া হয়েছে।”

গত ১৩ এপ্রিল এই তহবিল গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাতে সাড়া না দেওয়ায় ২৩ জুলাই ওই তহবিলের শর্ত এক দফা শিথিল করা হয়।

তহবিলের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিমূল্যের প্রত্যাবাসন (গাইডলাইন ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশনস-জেএফইটি এর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত) ওভারডিউ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুকূলে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হবে না।

২৩ জুলাই জারি করা এক সার্কুলারে তা সংশোধন করে বলা হয়, কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিমূল্যের প্রত্যাবাসন ওভারডিউ থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সুবিধা পাবে না।

গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণে পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের ক্ষেত্রে শর্ত পরিপালনে ব্যাংকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল বলে ওই সংশোধনী আনা হয়।

রোববারের সার্কুলারে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী এই ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদনের তারিখ থেকে আগের ছয় মাস কোনো রপ্তানি বিল বকেয়া থাকলে এই ঋণ পাওয়া যেত না। এখন তা বাড়িয়ে দুই বছর করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে ৩ শতাংশ সুদে। ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের দেবে ৬ শতাংশ সুদে।

আগের নিয়মে ঋণ নেওয়ার চার মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করার বিধান ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে।

এছাড়া রপ্তানিকারকদের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) নামে একটি তহবিল রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। আগে এই তহবিলের আকার ছিল ৩৫০ কোটি ডলার। দেশে করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ৭ এপ্রিল এই তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলার করা হয়।

একইসঙ্গে এ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে ব্যাংকগুলো লাইবর (লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে দশমিক ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে টাকা নিত। গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার ছিল লাইবর+ ১.৫ শতাংশ। যা প্রকৃতপক্ষে ৩ শতাংশ ৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যেত, কারণ লাইবর সব সময় উঠানামা করে।

এখন ব্যাংকগুলো ইডিএফ থেকে ১ শতাংশ সুদে টাকা নিয়ে ২ শতাংশে ঋণ দিতে পারবে।