বন্যায় ১৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি: কৃষিমন্ত্রী

এবার তিন দফার বন্যায় বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2020, 07:26 AM
Updated : 19 August 2020, 08:10 AM

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তিন দফার বন্যায় ৩৭টি জেলায় সব মিলিয়ে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

“২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, এর মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৫১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

এবার ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির ৩৩৪ কোটি টাকার আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির ৩৮০ কোটি টাকার আমন ধান এবং সাত হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য দেন কৃষিমন্ত্রী।

এছাড়া ২৩৫ কোটি টাকার সবজি এবং ২১১ কোটি টাকার পাটের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজ্জাক বলেন, “এ বছর বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সকলেই ছিলেন সতর্ক। ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য কৃষককে দেওয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরামর্শ।”

প্রথম দফায় ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ১৪ জেলায় বন্যায় ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রথম দফার বন্যায় ৩৩৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি এবং তিন লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৭ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ১১ জুলাই থেকে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় ৩৪টি ফসলের এক লাখ ১৬ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৯৭৪ কোটি টাকা, আর নয় লাখ ২৯ হাজার ১৩৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে শাকসবজি চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে জানান কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

তিনি বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় শাকসবজি চাষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৫১ হাজার ৬০০ জন কৃষককে লাল শাক, ডাটা শাক, পালং শাক, বরবটি, শিম, শসা, লাউ বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

“অধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় কৃষকদের জমিতে কমিউনিটিভিত্তিক বীজতলার মাধ্যমে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকার চারা উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ৩৩টি জেলায় ৩৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষকের মাঝে এসব চারা বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৫২৫ হেক্টর জমিতে এই বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে।”

এছাড়া ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাসমান বেডে ধানের চারা উৎপাদন করা হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এর আওতায় ৪০ জেলায় পাঁচ হাজার ৬০টি ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করা হচ্ছে, এতে এক হাজার ২৬৫ জন কৃষক সরাসরি উপকার পাবে।

ইতোমধ্যে চার হাজার ৩০৮টি ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে বলে তথ্য দেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২৫টি জেলায় ৬১ হাজার ৬০০টি ট্রে-তে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরি করে সেগুলো এক হাজার ৬০০ জন কৃষককে বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে ২২ হাজার ৭৭২টি ট্রে-তে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

“বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমন চাষ সম্ভব না হলে মাসকালাই বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর আওতায় ৩৫ জেলায় ৫০ হাজার কৃষককে তিন কোটি ৮২ লাখ টাকার মাসকালাই বীজ, ডিএপি, এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।”

১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় নয় লাখ ২৯ হাজার ১৯৪ জন কৃষকদের প্রত্যেককে গম, সরিষা, চীনা বাদাম, সূর্যমূখী, খেসারী, পেঁয়াজ. মরিচ, টমোটো আবাদের জন্য উপকরণ সরবরাহ করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পারিবারিক কৃষির আওতায় সবজি পুষ্টি বাগান কর্মসূচির আওতায় ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ৬৪ জেলার এক লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষককের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, চারা ও সার দেওয়া হয়েছে।”

এর বাইরে ২০২০-২১ অর্থবছরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন কর্মসূচি প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, এর আওতায় ১৫২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় ৪৯১টি উপজেলার চার হাজার ৫৯৭টি ইউনিয়ন ও ১৪০টি পৌরসভার চার লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হবে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় বীজ, সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম বেগবান, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ও যুগ্ম-সচিবদের নেতৃত্বে ১৪টি কমিটিতে ৭০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল দপ্তর করোনা ঝূঁকির মধ্যে অত্যন্ত সজাগ, সক্রিয় রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা কৃষেকের পাশে থেকে বাংলাদেশে কৃষির উৎপাদন ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধ পরিকর।

“আমরা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আবার বন্যা না হলে ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা যাবে এবং এই ক্ষয়ক্ষতি আমাদের খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে আশা রাখি।”

আবারও বন্যার পানি বাড়ায় একটু চিন্তায় আছেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, “আমি মনে করি এটা (বন্যা) খুব একটা বেশি দিন থাকবে না, তাড়াতাড়ি পানি নেমে যাবে।

“প্রকৃতি সব সময়ই আমাদের একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখে। প্রকৃতির ঝুঁকিকে আমরা ইচ্ছে করলেই এড়াতে পারি না। এটা বিবেচনায় রেখেই আমরা আশা করছি (এই বন্যার ফলে) সার্বিকভাবে দেশে খাদ্য উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না এবং আমরা বড় কোনো সঙ্কটে পড়ব না।”