সেবা রপ্তানিতেও মহামারীর ধাক্কা

পণ্য রপ্তানির মতো সেবা রপ্তানিতেও করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা লেগেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2020, 03:07 PM
Updated : 17 August 2020, 03:09 PM

গত অর্থবছরে ৬১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলারের সেবা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম প্রায় ২৮ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সেবা রপ্তানি থেকে ৮৫০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছির ৬৪৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী যেভাবে বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে, তার প্রভাব রপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।”

গত অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ১৭ শতাংশ কম হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

সামনের সময় নিয়ে আহসন মনসুর বলেন, “নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও আগামী মাসগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয় না।

“কারণ জুলাই মাসে যে রপ্তানি আয় দেশে এসেছে তা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে যে সব অর্ডার স্থগিত করেছিল বায়াররা, সেগুলোই পুনরায় অর্ডার দেওয়ায় রপ্তানি হয়েছে।”

“সে কারণে পণ্য-সেবা কোনো রপ্তানিতেই আগামী কয়েক মাস আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না,” বলেন তিনি।

অর্থবছর শেষে গত ৫ জুলাই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, আগের বছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ আয় কম হয়েছে।

৪ অগাস্ট নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম মাস জুলাইয়ের পণ্য রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে ইপিবি। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে।

কিন্তু সোমবার ইপিবি সেবা খাতের রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তথ্য। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) তথ্য। প্রতি মাসেই অবশ্য সেবা খাতের রপ্তানির তথ্য পরে প্রকাশ করে ইপিবি।

ওই তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের সেবা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের জুনের চেয়ে ১৮ শতাংশ এবং লক্ষ্যে চেয়ে ৪১ দশমিক ২২ শতাংশ কম।

সবমিলিয়ে গত অর্থবছরে বিদেশে বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে ৬১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ৬০৫ কোটি ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৯৮ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে।

এ খাতে গত অর্থবছরের চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়।

কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রপ্তানি আয় হিসাব করা হয়।

দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমান বন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা- যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা- কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ২৯৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে ‘অন্যান্য ব্যবসায় সেবা’ থেকে এসেছে ৮৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার।

বিভিন্ন ধরণের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ৫৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

আর্থিক সেবা খাত থেকে ১৬ কোটি ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ৩২ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।

গত অর্থবছরে বিভন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কম।

২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাত মিলে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৮০ কোটি ৫৯ লাখ (৩৯.৮০ বিলিয়ন) ডলার।

তার আগের বছরে (২০১৮-১৯ অর্থবছর) পণ্য ও সেবা খাত মিলে মোট আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৭০২ কোটি ৭৭ লাখ (৪৭.০২ বিলিয়ন) ডলার।

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এই লক্ষ্য গত অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি ডলার) কম।

তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।