সিপিডির প্রতিক্রিয়া ‘আন্দাজের উপর’: অর্থমন্ত্রী

গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ‘আন্দাজের উপর’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2020, 01:58 PM
Updated : 17 August 2020, 01:58 PM

অর্থবছরের রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা ও বিবিধ সংক্রান্ত সভা শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী এই প্রতিক্রিয়া জানান।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিডি রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলে, সরকার রাজনৈতিক সাফল্য দেখাতে প্রবৃদ্ধি ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে।

সিপিডি মনে করে, করোনাভারাইরাস মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব আমলে না প্রবৃদ্ধির সাময়িক এই হিসাব দেওয়া দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে জিডিপি অতিরঞ্জিত করে দেখালে কোনো লাভ তো হবেই না। উপরন্তু এর ফলে নীতিনির্ধারণে মারাত্মক ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

সিপিডির হিসাবে, গেল অর্থবছর দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে খাল, বিল, নদী, নালা, রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব কিছু দেখলে বোঝা যাবে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় আছে। কারও বিরুদ্ধে বলতে চাই না। একটা কথাই বলি, জিডিপি হিসাব যিনি বের করেন বা তৈরি করেন, তাকে একটি ভিত্তির উপর নির্ভর করতে হয়, হয় অনুমান আর না হলে তথ্য উপাত্ত।

“আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো যে ভিত্তির উপর নির্ভরশীল, সেটি হল তথ্য উপাত্ত। সিপিডি যদি কোনো আন্দাজ ভিত্তিক কোনো জিডিপি নিয়ে কথা বলে, তাহলে কতটা গ্রহণযোগ্য তা আপনাই নিজেরাই বুঝতে পারেন।”

মুস্তফা কামাল বলেন, “গত ১০ বছরে তাদেরকে আমরা দেখেছি একটি জায়গায় তারা আমাদের এসব (তথ্য) কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। আমরা বাজেট দিলেই তাদের অনুষ্ঠান করার সময় এসে যায়। সারা বছর কোন অনুষ্ঠান করে না, কাঁচামাল এখান থেকে নিয়ে বিদেশে এক্সপোর্ট করে। এগুলো তাদের ব্যবসা, সহজ ব্যবসা।

“তাদের কাছে তথ্য কোথায় আছে, কোন তথ্য তারা রাখে, কিসের ভিত্তিতে তারা বলে। আন্দাজ করে বললেও তো ওনারা কি রাস্তা ঘাট দেখে না? পাওয়ার প্ল্যান্ট, মেগা প্রকল্পগুলো দেখে না?”

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (ফাইল ছবি)

বিগত বছরগুলোর রাজস্ব আয়ের তথ্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজস্বের দিকে তাকান ২০১৮-১৯ সাল শক্তিশালী বছর ছিল, করোনাভাইরাস আক্রান্তকালে দুই লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছি আগের বছরের তুলনায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম। এর থেকেও বোঝা যায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হওয়া উচিৎ।”

তিনি বলেন, “আমি যদি ৮ দশমিক ২ ভাগ বলতাম, যেটা আমাদের আগের প্রজেকশন ছিল, তাইলে উনারা বলতে পারতেন, এখানে কিভাবে হল? ৫ দশমিক ২ ভাগ বলেছি। সুতরাং এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এ নম্বরগুলো দিই।”

তবে সিপিডি আছে বলে বেশি ‘অনুপ্রাণিত’ হওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন মুস্তফা কামাল।

“তাদের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলব না, তারা আছে বলেই আমরা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হই, আমরা করে প্রমাণ করার চেষ্টা করি। যখন যা বলেছি তখন তা সঠিক হয়েছে। এরা কী বললো তা দেখে লাভ নাই।”

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

মহামারীর সময়ে উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধি ধরার জন্য বাজেট ঘোষণার পর পরই অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করেছিলেন।

মহামারীর ধাক্কায় বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হওয়ার কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক কম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ।

সিপিডি বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

সরকার লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করেছিল।

সিপিডি আন্দাজের উপর কথা বলছে- এ কথাটি যথার্থ হল কি না- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি যা বলছি যথার্থ। ওদেরকে বলেন তাহলে কত হবে, আমাদের এক বছরের জিডিপি বের করে দিতে বলেন এবং তারা আমাদের পরিসংখ্যান অফিস যেতে পারবে না। তারা নিজেরা পরিসংখ্যান দিক… ঠিক আছে।”

তিনি বলেন, “সিপিডি সিপিডির কাজ করবে, আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। আমরা কাজ করছি আপনারা বিশ্বাস করবেন না বিশ্বাস করবেন এটা আপনাদের ব্যাপার। আমাদের হিসাব যে সঠিক, সেটা সারা বিশ্ব স্বীকার করে। সিপিডি স্বীকার না করলে অসুবিধা নাই।”