প্রবৃদ্ধির হারকে রাজনৈতিক সংখ্যা বানানো হয়েছে: সিপিডি

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, সরকার রাজনৈতিক সাফল্য দেখাতে প্রবৃদ্ধি ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2020, 11:50 AM
Updated : 16 August 2020, 05:25 PM

২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব নিয়ে রোববার এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এই প্রতিক্রিয়া জানান।

সিপিডি মনে করে, করোনাভারাইরাস মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব আমলে না প্রবৃদ্ধির সাময়িক এই হিসাব দেওয়া দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে জিডিপি অতিরঞ্জিত করে দেখালে কোনো লাভ তো হবেই না। উপরন্তু এর ফলে নীতিনির্ধারণে মারাত্মক ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

সিপিডির হিসাবে, গেল অর্থবছর দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না। 

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “জোসেফ স্টিগলিজ-অমর্ত্য সেনসহ পৃথিবীর অনেক অর্থনীতিবিদ প্রবৃদ্ধির হিসাবকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন। কিন্তু আমরা দুঃখজনকভাবে দেখছি যে, এটাকে সরকারের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে দেখানো হয়।

“তাই আমরা বলছি যে এটা একটা রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে- এটার কোনো দরকার নেই।”

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে তার আগের অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে যদি কেউ বলে তাহলে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি।”

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন প্রান্তিকে একমাত্র প্রবাসী আয়ের খাত ছাড়া সব সূচকের নেতিবাচক অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চতুর্থ প্রান্তিকের মহামারীকাল, যেখানে প্রবৃদ্ধির প্রশ্নই আসে না।

“সবটা বিবেচনায় নিয়েই আমরা বলছি, যে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ যে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে- এটা বাস্তবতার সাথে মিল খাচ্ছে না।”

অক্টোবরে চূড়ান্ত হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস জিডিপির প্রকৃত হিসাব তুলে ধরবে বলে আশাপ্রকাশ করে মোস্তাফিজুর বলেন, কিন্তু এখন যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা নীতিনির্ধারকদের ভুল বার্তা দিতে পারে, যেখান থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার শঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, “চলমান পরিস্থিতিতে যখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, মানবিক বিপর্যয়, মানুষের আয় কমে গিয়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে আছে। তখন এবারে সঠিক তথ্য উপাত্তের প্রয়োজনীয়তাটা আরো অনেক বেড়ে গেছে।”

মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিবিএসের হিসাবে গত অর্থবছরের কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ; শিল্প খাতে দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যা তার আগে ছিল ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ; সেবা খাতে দেখানো হয়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা আগে ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

মূল প্রবন্ধে তিনি দেখান, খনিজ সম্পদ খাতের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে নেমেছে; উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমেছে; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আগের অর্থবছরের ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমেছে এবং নির্মাণ খাত ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ০৬ শতাংশে নেমেছে।

মহামারীর কারণে শুধুমাত্র এপ্রিল মাসের ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, শিল্প খাতে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ উৎপাদন নেতিবাচক, রপ্তানি কমে গিয়েছিল ৫১ দশমিক ২ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নও ৯২ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে নেমে এসেছে।

তৌফিকুল বলেন, “সকল খাতেই নেতিবাচক হওয়া সত্বেও এতো প্রবৃদ্ধি হলো কী করে? তবে কি পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই তথ্য উপাত্তে করোনাকালীন স্থবির অর্থনীতিকে আমলে নেওয়া হয়নি?”

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

মহামারীর সময়ে উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধি ধরার জন্য বাজেট ঘোষণার পর পরই অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করেছিলেন।

মহামারীর ধাক্কায় বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হওয়ার কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক কম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ।

সিপিডি বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

তবুর সরকার লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করেছিল।