রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই

মহামারীর মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করতে চলেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 08:41 PM
Updated : 13 August 2020, 08:43 PM

বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আগামী সপ্তাহের শুরুতেই রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন (তিন হাজার ৮০০ কোটি) ডলার ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে রেমিটেন্সের গতিতে ছেদ তো পড়েইনি, বরং তা আরও বেড়েছে। গত জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে এত বেশি রেমিটেন্স দেশে আসেনি। চলতি অগাস্ট মাসের ছয় দিনে (১ অগাস্ট থেকে ৬ অগাস্ট) ২৯ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

“মূলত রেমিটেন্সের উপর ভর করেই রিজার্ভে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।”

এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত জুন মাসে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিটেন্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতির ধারা চলছে।

রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থবছরে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও এই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।

ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছিল।

রেমিটেন্সের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

গত চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) এই দাতা সংস্থাগুলোর সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে।

এক বছর আগে গত বছরের ৮ অগাস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ জুলাই সেই রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

এরপর ৭ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মাসের ৭২ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠানোয় সেই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

আকুর জুলাই-অগাস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।