ঢাকায় ফেইসবুকের সেলস পার্টনারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

বাংলাদেশে ফেইসবুকের অনুমোদিত সেলস পার্টনার এইচটিটিপুল বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৯৩ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

জাফর আহমেদআবদুর রহিম হারমাছি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 02:04 PM
Updated : 13 August 2020, 03:43 PM

বৃহস্পতিবার এই মামলা করা হয়েছে বলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড রহস্যজনক। তাদের অফিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার নামে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নেওয়া, তিনি বলছেন এখন তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নেই।”

প্রতিষ্ঠানটি আরও কোনো আর্থিক অনিয়ম করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান মইনুল খান।

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, হাফিজুর রহমান খানের (পিতা মোকাদ্দেস খান) নামে এইচটিটিপুল বাংলাদেশের নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, শাহ আলী টাওয়ার, ১১ তলা, ৩৩ কাওরানবাজার, ঢাকা।

মইনুল খান বলেন, চলতি বছরের মে মাসে ফেইসবুকের এজেন্ট এইচটিটিপুল বাংলাদেশ লিমিটেড ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করে। যার নম্বর- ০০২৮৪৮৮৩৬৭০২০৩।

“কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পান, এইচটিটিপুল বাংলাদেশ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম বা অস্তিত্ব ওখানে নেই। বনানীতে অফিসটি স্থানান্তর করা হয়েছে জানানো হয়। কিন্তু তাদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী, বনানীতে গিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা ওই অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি।

“ভ্যাট আইন অনুসারে অফিস পরিবর্তন করতে হলে ভ্যাট অফিসকে জানাতে হবে। তাদের এই পরিবর্তনের কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি।”

মইনুল খান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তিন মাস আগে নিবন্ধন নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করেনি। ভ্যাট আইন অনুসারে প্রতি মাসে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।

“এইচটিটিপুল প্রতি মাসে রিটার্ন দাখিল না করায় প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক কর্তনকৃত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি।”

মইনুল খান বলেন, “ভ্যাট গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী স্থানীয় ফেইসবুক এজেন্ট এইচটিটিপুল ইতোমধ্যে ৩১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৯৮টি চালানে ৬ কোটি ২২ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করেছে। এতে তারা ১৫ শতাংশ হারে ৯৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার ভ্যাট কর্তন করেছে।

“ফেইসবুক এজেন্টের ঠিকানা সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় এবং মাসিক রিটার্ন জমা না করায় তাদের হাতে থাকা সরকারের ৯৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

“এই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা না হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ায়, মাসিক রিটার্ন দাখিল না করায় এবং অনুমোদন ব্যতিরেকে অস্তিত্বহীন হওয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।”

মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য হাফিজুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এইচটিটিপুলের সঙ্গে এখন আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে।”

কাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশে এইচটিটিপুলের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী মনিরুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যম থেকে জেনেছি, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি আমরা পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হবে।”

এইচটিটিপুলের অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন বা ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বাংলাদেশে ফেইসবুকের জন্য অনুমোদিত সেলস পার্টনার হিসেবে এইচটিটিপুলকে নিযুক্ত করা হয়েছে বলে গত ২২ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এইচটিটিপুল এখন থেকে স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে সহায়তা এবং স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ তৈরি করে দেবে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল।

সেখানে ফেইসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ইমার্জিং মার্কেট ডিরেক্টর জর্ডি ফরনিসকে উদ্বৃত করে বলা হয়েছিল, “দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ফেইসবুকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর একটি। তাই এ দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও বেশি সংযুক্ত হওয়া আমাদের কাছে প্রাধান্য পায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সফলভাবে আমাদের সেলস প্রতিনিধিদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের পর এইচটিটিপুলকে বাংলাদেশে ফেইসবুকের অনুমোদিত সেলস পার্টনার হিসেবে আনতে পেরে আমরা আনন্দিত।

“স্থানীয় ও আঞ্চলিক বাজারের ওপর এইচটিটিপুলের যে ব্যাপক ধারণা ও দক্ষতা রয়েছে তার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোকে এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে এবং তাদের সম্ভাব্য বিস্তৃতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারব।”