২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১২ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৩৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম মাসেই লক্ষ্যের চেয়ে ৭ হাজার ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
শতাংশ হিসাবে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৩৫ ভাগ কম হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে কম আদায় হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
অথচ গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাসে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল।
মহামারীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব আহরণ গতি হারালেও চলতি অর্থ বছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আগের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা ‘অবাস্তব’ বলে তখনই প্রতিক্রিয়া এসেছিল অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে।
প্রথম মাসের চিত্র দেখে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, “রাজস্ব আদায় কম হবে, এটা তো অবধারিতই ছিল। সরকারও জানত কম হবে; এনবিআরের কর্মকর্তারাও জানতেন কম হবে। উচ্চাভিলাষী-অবাস্তব লক্ষ্য ধরলে তো এমন হবেই।”
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা।
এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ভ্যাট থেকে ৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৪ হাজার ২১৯ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৭ হাজার ৪২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল।
এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, ভ্যাট থেকে ৩ হাজার ৭৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ থেকে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ২৬ লাখ এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৯২৯ কোটি ৩ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ভ্যাট আদায় কমেছে ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আয়কর আদায় কমেছে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর আমদানি শুল্ক আদায় কমেছে ৭ শূণ্য ২ শতাংশ।
গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এই তিন খাতে মোট ১৫ হাজার ৮২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।
অর্থাৎ গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজেট ঘোষণার পরপরই আমরা বলেছিলাম, বিশাল এই লক্ষ্য অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
“করোনাভাইরাস মহামারীতে মানুষের আয়-উপার্জন নেই। সবকিছু খুলে দিলেও অর্থনীতি সচল হয়নি। কতদিনে পুরোপুরি সচল হয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসবে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় রাজস্ব আসবে কোত্থেকে? ট্যাক্স দেবে কে?”
চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ভাবনাকে ‘বোকামি’ বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।
“রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকের অবস্থা খারাপ। রেমিটেন্সের ভালো অবস্থাও আর থাকবে বলে মনে হয় না। জুলাইয়ে রপ্তানি আয় বাড়লেও এটা যে আগামী অব্যাহত থাকবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা, বিশ্ব অর্থনীতির এখনও টালমাটাল অবস্থা। সে অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি সহসা সচল হবে বলে মনে হয় না।”
“আমার তো মনে হয়, গত অর্থবছরের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় কম হবে,” বলেন তিনি।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যাপক সংস্কারের উপর জোর দিচ্ছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ এর এই কঠিন পরিস্থিতিতে যে সব খাত ভালো করছে, তাদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করতে হবে; আর যারা খারাপ করছে তাদের ছাড় দিতে হবে।”