আমদানিতে খরা কাটছে

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তলানিতে নেমে আসা আমদানি বাড়তে শুরু করেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2020, 07:25 PM
Updated : 31 July 2020, 07:26 PM

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার আমদানির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অংক মে মাসের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।

মে মাসে ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। তার আগের মাস এপ্রিলে হয়েছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যা এক মাসের হিসাবে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৫৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ২৫ মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ওই মাসে ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ।

তার আগের তিন মাস ফেব্রুয়ারি, জানুয়ারি ও ডিসেম্বরে আমদানি হয়েছিল যথাক্রমে ৪৭২ কোটি ৩৭ লাখ, ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ ও ৫২৫ কোটি ৪২ লাখ ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে এক হাজার ৩৬৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল ওই অর্থবছরের মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের আমদানির মোট তথ্য পাওয়া গেলেও দেশভিত্তিক আমদানির তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান শহরে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তা বিভিন্ন দেশে ছড়াতে শুরু করলে প্রায় সব দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। ওই সময় বাংলাদেশে পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগাড় হয়।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর গত কয়েক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, রপ্তানির মত আমদানিও তলানিতে নেমে এসেছিল এপ্রিল মাসে। ওই মাসে গোটা পৃথিবীই স্থবির হয়ে পড়েছিল। মে মাসেও তার প্রভাব ছিল। জুন মাস থেকে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জীবন-জীবিকা একসঙ্গে চালাতে সব দেশের অর্থনীতিই ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে। আমদানিও বাড়ছে। বাংলাদেশেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানির পাশাপাশি রপ্তানিও বাড়তে শুরু করেছে।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, “ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন আমদানি বাড়ায় বিনিয়োগের বিপর্যয় আস্তে আস্তে কেটে যাবে বলে মনে হচ্ছে।”

এই মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীরা বিপুল অংকের রেমিটেন্স দেশে পাঠানোয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে। ফলে এখন আমদানি বাড়লেও খরচ মেটাতে সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহামারীতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে এখন সরকার-বেসরকারি খাত মিলে ‘একসঙ্গে’ কাজ করতে হবে। সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে ‘আন্তরিক’ হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়াতে হবে।

“তাহলে আমরা আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব। আমদানি বাড়বে; রপ্তানি বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনীতি সচল হবে।”

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।

এর মধ্যে এপ্রিল মাসে আয় হয় মাত্র ৫২ কোটি ডলার। মে মাসে তা বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার হয়। সর্বশেষ জুন মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় দুটোই কমেছে। এর আগের বছরগুলোতে কখনও কখনও রপ্তানি আয় হোঁচট খেলেও আমদানি ব্যয় বরাবরই বেড়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি খাতে বাংলাদেশের খরচ হয়েছিল ৫৮ দশমিক ৮৬ ডলার। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৬-১৭) চেয়ে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।