মহামারীর ধাক্কা সামলাতে ১৭ বছর পর কমল ব্যাংক রেট

করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় দীর্ঘ ১৭ বছর পর ‘ব্যাংক রেট’ কমালো বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2020, 03:57 PM
Updated : 29 July 2020, 03:57 PM

বুধবার ২০২০-২১ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করেছে, সেখানে ব্যাংক রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, যা ২০০৩ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ ছিল।

ব্যাংক রেট বলতে সেই সুদ হারকে বোঝায় যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেয়। ব্যাংক রেট মুদ্রানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি উপাদান (পলিসি টুলস) হিসেবে বিবেচিত।

বিভিন্ন পলিসি রেট বিভিন্ন সময়ে কমানো হলেও ব্যাংক রেট অপরিবর্তিত ছিল দীর্ঘসময়।

মুদ্রানীতি ঘোষণার পর এ বিষয়ে একটি সার্কুলারও জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি ঘোষিত ঋণ/বিনিয়োগের সুদ/মুনাফা হার যৌক্তিকীকরণ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক রেট বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৫ ভাগ থেকে ১০০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে শতকরা ৪ ভাগে পুনঃনির্ধারণ করা হল।”

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদণা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্রণোদণার একটি বড় অংশ ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের ঋণ হিসেবে দেবে।

এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নেবে সেই ঋণের সুদ হার হবে ৪ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কঠিন এই সঙ্কটে বাজারে অর্থের জোগান বাড়াতে ব্যাংক রেট কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এর ফলে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।”

সামগ্রিক বিবেচনায় মহামারীর এই সময়ে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি দেওয়া ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘আর কোনো পথ ছিল না’ বলেই মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর।

বাজারে অর্থের জোগান বাড়াতে নতুন মুদ্রানীতিতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহারও কমানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, “নতুন মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হল চলমান করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা এবং সরকার নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আর্থিক খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা।

“সে হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতির ভঙ্গিকে স্পষ্টতই সম্প্রসারণমূলক ও সঙ্কুলানমুখী হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যার মূল কাজ হলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক অর্থাৎ কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।”