মহামারীকালে ৩৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রিজার্ভ

মহামারীর মধ্যেই অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন (তিন হাজার ৭০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2020, 06:26 PM
Updated : 28 July 2020, 07:09 PM

মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।

প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে নয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফনের কারণে রিজার্ভ এই মাইলফলক স্পর্শ করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে রেমিটেন্সের গতিতে ছেদ তো পড়েইনি, বরং তা আরও বেড়েছে। চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনেই ২২৪ কোটি ২০ লাখ (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স আসেনি।

“মাসের এখনও চার দিন বাকি। এই চার দিনের রেমিটেন্স যোগ হলে মাস শেষে রেমিটেন্স আড়াই বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত জুন মাসে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

গত বছরের জুলাই মাসে ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিটেন্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতিরধারা চলছে।

রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থবছরে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও এই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ১ অগাস্ট ঈদ উদযাপিত হবে। তার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ জুলাই মাসের পুরোটা সময় ধরে রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফন অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।

এই অঙ্ক আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছিল।

রেমিটেন্সের পাশপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এই দাতা সংস্থাগুলোর প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে।

এক বছর আগে গত বছরের ২৫ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ জুলাই সেই রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

এরপর ৭ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মাসের ৭২ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠানোয় সেই রিজার্ভ মঙ্গলবার ৩৭ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছে।

আকুর জুলাই-অগাস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।