আমার বাড়ি আমার খামার: চতুর্থ দফা বাড়ছে মেয়াদ

করোনাভাইরাস সঙ্কটে অগ্রগতি থমকে যাওয়ায় ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প সংশোধন করে চতুর্থবারের মত মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

জাফর আহমেদজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 06:58 AM
Updated : 27 July 2020, 06:58 AM

দারিদ্র্য বিমোচনে ২০০৯ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০১৪ সালের জুন মাসে শেষ করার কথা থাকলেও সময় মত বরাদ্দের অভাবে এর আগে তিনবার সংশোধন করে এ বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।

এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭১ দশমিক ১৭ শতাংশ। তার ওপর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত এপ্রিল থেকে কাজ একপ্রকার বন্ধ ছিল। এ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করছে পরিকল্পনা কমিশন।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকিএক তিনি বলেন, “কাজ যা বাকি আছে এক বছর মেয়াদ বাড়ালে আগামী বছরের মধ্যে তা শেষ করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।”

স্থানীয় মানব সম্পদের ‘সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে’ গ্রামের প্রতিটি বাড়িকে একটি টেকসই কৃষি ভিত্তিক আয়বর্ধক ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার।

পরিকল্পনা ছিল, এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি গ্রামের ৬০ জন (৪০ জন নারী ও ২০ জন পুরুষ) দরিদ্র বা হত দরিদ্র এবং ভিক্ষুক পরিবার নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হবে। ক্ষুদ্র সঞ্চয় পদ্ধতিতে মূলধন গঠন করে আত্ম- কর্মসংস্থানের জন্য আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে এসব সমিতি।

প্রতিটি সমিতি থেকে নির্বাচিত সুবিধাভোগীদের কৃষিনির্ভর আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ারও কথা ছিল।

সারা দেশে এক লাখ ২০ হাজার ‘গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’ গঠন করে ৫৪ লাখ ৬০ হাজার পরিবারকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করার এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হারে ২ বছরের সঞ্চয় সমিতির নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করার লক্ষ্য নেওয়া হয় এ প্রকল্পে।

ওই অ্যাকাউন্টে দুই বছরে সমিতির সদস্যদের নামে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা হলে প্রকল্পের তহবিল থেকে সম পরিমাণ, অর্থাৎ আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঘূর্ণায়মাণ তহবিল হিসেবে সমিতিকে তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা।

সমিতির এক লাখ ৪৪ হাজার ১০০ জন সদস্যকে ভার্মিকম্পোস্টিং, ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সমিতি ব্যবস্থাপনাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ের ওপর এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয় প্রকল্পের শুরুতে। 

এছাড়া গ্রাম উন্নয়ন তহবিল থেকে সমিতিভুক্ত ৬০ শতাংশ পরিবারকে ঋণ দিয়ে পারিবারিক ক্ষুদ্র কৃষি খামার স্থাপন করার লক্ষ্য রয়েছে এ প্রকল্পে। একইভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রতি উপজেলা ও জেলায় একটি করে অফিস কাম অনলাইন বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনেরও লক্ষ্য রয়েছে।

গ্রাম উন্নয়ন তহবিল গঠনের পর এখন তহবিলসহ সমিতি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অধীনে স্থানান্তর করে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক সেবা অব্যাহত রেখে সমিতির কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলার ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়নে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে হতদরিদ্র মানুষের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে নেমে আসবে বলে সরকার আশা করছিল।

কিন্তু বছর ভিত্তিক বরাদ্দে অপ্রতুলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সমিতির সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও খামার স্থাপনের লক্ষ্যও অনেক ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি।

২০০৯ সালে শুরুর সময় ৫ বছর মেয়াদের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তিনবার সংশোধনে তা ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

তবে এবার ব্যয় ১২৫ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমিয়ে এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ।

বছর ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটির জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেওয়া হয় ১৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এরপর ২০১৭-১৮ পর্যন্ত সাত অর্থবছরে যথাক্রামে ৪২৯ কোটি, ৫১১ কোটি, ৫২৮ কোটি, ৫৬২ কোটি, ৪৭৯ কোটি, ৬৯৬ কোটি, ৬৯৬ কোটি টাকা পায় এ প্রকল্প।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ১৭৩ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পর চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে এক হাজার ২০১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবারের একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য তৈরি প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এক লাখ ২০ হাজার সমিতি গঠনের লক্ষ্যের মধ্যে এ পর্যন্ত গঠন করা হয়েছে ১ লাখ তিন হাজার ২৭৭টি সমিতি। সেই সঙ্গে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার তহবিল গঠন হয়েছে।

এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪ জন উপকারভোগী প্রকল্পভুক্ত হয়েছে। এসব উপকারভোগীর মধ্যে ৬ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ৪৯ হাজার জনকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। আর ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৬ জন তিন থেকে পাঁচ দিনের কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।