যুব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আলাদা বাজেটের পরামর্শ

দেশের যুব জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে তাদেরকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার রূপরেখা জাতীয় বাজেটে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2020, 01:14 PM
Updated : 25 July 2020, 01:14 PM

দেশে এনিয়ে পর্যাপ্ত নীতিমালা তৈরি হলেও সমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাবে সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেও মত দিয়েছেন তারা।

শনিবার একশনএইড ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং-সানেম এর আয়োজনে‘ইউথ বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক’ শিরোনামের এক ওয়েবিনারে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।

একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ইয়ং বাংলা ন্যাশনাল ইউথ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন কর্মীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ইশরাত শারমীন।

তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে তারুণ্যের হার বাড়তে শুরু করেছে। দেশে যুব সংক্রান্ত পর্যাপ্ত নীতিমালা থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। তাই যুবজনমিতির সঠিক সুফল এখনও পাওয়া যায়নি।

কোভিড-১৯ মহামারীর বিশেষ পরিস্থিতিতে যারা নতুন করে কাজ হারাচ্ছেন তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন থাকলেও এবারের বাজেটে তা অনুপস্থিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের যে ২২টি মন্ত্রণালয়ের কাজের সঙ্গে যুব সমাজের উন্নয়নের বিষয়গুলো জড়িত তাদের ৫৭ শতাংশ কাজেই তরুণ কিংবা যুবকদের কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো নেই (ইউথ ফোকাসড নয়) জানিয়ে তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে যুবক-যুবতীদের স্বার্থ আরও কিভাবে যুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।”

ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটান তাদের বাজেটে যুবগঠন নিয়ে পৃথক অধ্যায় যোগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এই কাজটি অনেক আগেই করা উচিত ছিল।

প্যানেল আলোচনায় ইয়ং বাংলা ন্যাশনাল ইউথ প্লাটফর্মের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, সঠিক তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি যুবগঠনের পেছনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের একটি কেন্দ্রিয় সমন্বয় সেল বা তদারকি সেল থাকা খুবই জরুরি যাতে যুবকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২২টি মন্ত্রণালয়ের কাজ সঠিকভাবে সমন্বয় করা যায়।

“প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেল থাকলেও তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আমাদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, এনিয়ে পর্যাপ্ত ও মান সম্পন্ন তথ্য-উপাত্তের অভাব। এই ক্ষেত্রে ব্যুরো অব স্ট্যাটেসটিকসের ওপর দায়টি বর্তায়।”

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “আমরা বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই। আশা করছি, আমাদের সামগ্রিক কাজে এই ফ্রেমওয়ার্কের একটি প্রতিফলন অবশ্যই আমরা দেখতে পাব।”

ফারাহ কবির বলেন, “এই ধারণাপত্রটি যুব জনগোষ্ঠীর সার্বিক জীবন-মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সহায়ক হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এটা আমলে নিবেন এবং আমরা সবাই মিলে একসাথে কিভাবে কাজ করতে পারি আশা করি আলোচনায় সেটা গুরুত্ব পাবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের দেশে। তথ্য ঘাটতির কারণে অনেক যুবক অদৃশ্যমান রয়ে যায়। প্রান্তিক সেইসব যুবদেরকে তথ্য প্রোফাইলে যুক্ত করতে হবে। যুবদের জন্য যথাযথ ও কার্যকর প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকানণ্ডে যুক্ত করতে হবে। বাজেট বরাদ্দ যেমন দিতে হবে, তেমনি বরাদ্দকৃত বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

সবাইকে প্রযুক্তির আওতায় না আনা গেলে প্রযুক্তি বিভাজন তৈরি হবে, যা বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব (উন্নয়ন) বেলায়েত হোসেন তালুকদার বলেন, শিক্ষা বাজেটের পুরো বরাদ্দ কার্যত যুবদের জন্যই ব্যয় হয়। তবে দক্ষ যুব জনগোষ্ঠী গঠনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাজিবুল ইসলাম বলেন, “জনমিতি লভ্যাংশের সুবিধা নিতে আরও গুণগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এই সুবিধা আদায়ে আমরা যেন নাইজেরিয়ার মতো হারিয়ে না যাই বরং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করতে পারি সেই পরিকল্পনা করতে হবে।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব ওমর ফারুক বলেন, “একটি দেশে ৬০ শতাংশ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগণ থাকা উচিৎ। যেখানে বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ১৭.১৪ শতাংশ। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে সেটা ছিল এক শতাংশের ঘরে। এসব হিসাব থেকে বোঝা যায় করিগরি শিক্ষায় বিশেষ করে চাহিদাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষায় পরিকল্পিতভাবে যুব জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, “চাকরির বাজারের সাথে যুব জনগোষ্ঠীর দক্ষতার একটি সুস্পষ্ট গ্যাপ লক্ষ্য করা যায়। এই গ্যাপ পূরণে যুবদের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

“আমাদের দেশে লাখ লাখ বেকার আছে এটা যেমন সত্য, আবার এই দেশের নেতৃত্বস্থানীয় চাকরির পদগুলোতে প্রায় পাঁচ লাখের মতো ভিনদেশি কাজ করে যাচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে,” বলেন এই অধ্যাপক।