ছোট ঋণের ঝুঁকির ভাগ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও মহামারীকালে ব্যাংকগুলো ছোট ঋণ বিতরণে এগিয়ে না আসায় এই ঋণের ঝুঁকির ভাগ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এজন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বা ঋণ নিশ্চয়তা স্কিম নামে দুই হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2020, 05:32 PM
Updated : 24 July 2020, 05:46 PM

বৃহস্পতিবার গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই তহবিলের নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি তারা এই সুবিধা পাবে না। ফলে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকও এ সুবিধার বাইরে থাকবে।

ব্যাংকগুলো কুটির, ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তাদের নতুন করে যেসব ঋণ দেবে, তার বিপরীতে নিশ্চয়তা নিতে পারবে। এ জন্য প্রথম বছরে এক শতাংশ হারে গ্যারান্টি মাশুল দিতে হবে। পরের বছরগুলোতে পাঁচ শতাংশে নিচে খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংকগুলো দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে মাশুল দেবে। এর বেশি খেলাপি থাকা ব্যাংক মাশুল দেবে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এই নীতিমালা অনুমোদনের কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছে সরকার। এই তহবিলের অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যোগান দেওয়া হবে। তারপরও ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছিল না।

“ব্যাংকগুলো যাতে সিএমএসএমই খাতে ঋণ দিতে এগিয়ে আসে সেজন্যই এই দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই তহবিলের টাকা দিয়ে ছোট ঋণের ঝুঁকির দায়িত্ব নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

“এর ফলে গ্যারান্টি থাকা ঋণ খারাপ হয়ে গেলেও ব্যাংকগুলো ক্ষতিপূরণ পাবে। শুধু মহামারীকালে নয়, সব সময়ের জন্যই এই তহবিল, এই নীতিমালা।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।

তিনি বলেন, “এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। পৃথিবীর অনেক দেশই এ ধরনের তহবিল করেছে। ভারত ২০ বছর আগে করেছে। আমরা দেরিতে হলেও করতে যাচ্ছি। আমি এ উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই।”

মহামারীতে এমন ছোট উদ্যোক্তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন (ফাইল ছবি)

‘ছোট ঋণের ঝুঁকি বেশি থাকে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগের ফলে এ খাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি এখন অনেকটাই কমে যাবে। অনেক ব্যাংক এখন আগ্রহ নিয়ে ঋণ বিতরণ করবে।

“শুধু করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবেলা নয়, সামগ্রিকভাবে সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়ে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সিএমএসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক। এখন পর্যন্ত এ খাতে বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ২০ শতাংশই এই ব্যাংক বিতরণ করেছে।

চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংক সিএমএসএমই খাতে মোট ১১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে বলে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী সেলিম জানান।

“আমরা একেবারে ছোট উদ্যোক্তাদের বেশি ঋণ দিয়ে থাকি। যেটাকে আমরা সিএমএস (ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প) খাত বলে থাকি। এসএমই খাতের আমাদের মোট ঋণের ৭০ শতাংশই সিএমএস খাতে দেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের একটা খসড়া ব্র্যাক ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। সেই খসড়ায় ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ বা মতামত দেওয়া হয়েছিল।

“সবার সুপারিশের আলোকেই নীতিমলাটি করা হয়েছে। আশা করছি এই নীতিমালা বাংলাদেশের সিএমএসএমই খাত তথা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”

প্রতিবেশী ভারতেও ছোট ঋণে নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি রুপি প্রণোদনার প্রায় অর্ধেক বিতরণ করে ফেলেছে দেশটির ব্যাংকগুলো।

তবে বাংলাদেশে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা তহবিলের পাঁচশ কোটি টাকাও বিতরণ হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন হওয়া নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব ঋণে নিশ্চয়তা দেওয়া হবে, ওই ঋণের ওপর নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে না। শুধু নতুন ঋণেই এই নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। নিশ্চয়তা থাকা কোনো ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসলে পুরো টাকা ফেরত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সরকার সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনার জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল করেছে সেই ঋণের নিশ্চয়তার মেয়াদ হবে তিন বছর। আর প্রণোদনার বাইরে ঋণে নিশ্চয়তার মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সিএমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানকে চলতি মূলধন জোগান দিতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার সুদের হার হচ্ছে নয় শতাংশ। তবে উদ্যোক্তাদের সুদ দিতে হবে সাড়ে চার শতাংশ। বাকি সাড়ে চার শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দেবে।

আরও পড়ুন