প্রণোদনায় শ্রমঘন শিল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান

সরকার এসএমই খাতের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা বিতরণে শ্রমঘন শিল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান এসেছে এক সংলাপ থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2020, 04:41 PM
Updated : 2 July 2020, 04:20 PM

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘জব ক্রিয়েশন ইন দ্যা কোভিড-১৯’ শীর্ষক ওই সংলাপে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ওই উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা পুনরায় শুরু করতে পারলে তাতে কর্মসংস্থানেও গতি আসবে।

তিনি বলেন, এখন তৈরি পোশাক খাতে ক্রয় আদেশ নেই। আগামী এক বছরের মধ্যে যদি আগের ৭০ শতাংশ ক্রয় আদেশও ফিরে আসে, তাতেও প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মী চাকরি হারাবে। এর মধ্যে ছোট ছোট কারখানাগুলো বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

এসএমই খাতকে চাঙ্গা করার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং রপ্তানি খাত বিশেষ করে পোশাক রপ্তানি খাতেই বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

“তাদের খুব বেশি টাকারও দরকার নেই। ১০ থেকে ২০ লাখ দিলেই তারা কাজ শুরু করে দিতে পারবে। ইতোমধ্যে যারা বেকার হয়েছে, তাদেরকেও পুনরায় চাকরি দিতে পারবে।”

সরকার গৃহীত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পটির প্রশংসা করে এর প্রচার বাড়ানোর পরামর্শ দেন অর্থনীতির এই বিশ্লেষক।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ম্যাকেঞ্জি গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের সাবেক রিসার্চ ফেলো এবং শক্তি ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ।

তিনি বলেন, শ্রমঘন শিল্প ও শ্রমঘন প্রকল্পে নীতি সহায়তা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা ব্যাংকিং লেনদেনের বাইরে রয়েছে, এসব উদ্যোক্তাদের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছানোর মাধ্যমে এই সঙ্কটকালেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

সংলাপে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর নির্বাহী পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, এসএমইর মধ্যে ‍কুটির শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

একটি জরিপের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, কুটির শিল্পখাতে গত এপ্রিল মাসে ৩০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। তবে মে মাসে কিছুটা বেড়েছে।

“সরকার এসএমই খাতের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেখান থেকে এখনও মাত্র ৮০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অথচ হাজার হাজার মানুষ আবেদন করেছেন।”

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে কুটির শিল্পের উদ্যোক্তার ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা নেই।

তাই তাদের জন্যেঋণ এমএমই ফাউন্ডেশন, এনজিও বা এরকম প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দিলে কুটির শিল্পখাতে ঋণ বিতরণ আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছানো যেত।

পিকেএসএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের সংলাপে বলেন, পিকেএসএফ ইতোমধ্যে তার সঙ্গে কাজ করে এমন ২০০টি এনজিওর সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে সতর্কতামূলক প্রচারের জন্য চুক্তি করেছে।

তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে তারা আরও অনেক বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।

সংলাপে এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, কোভিড ১৯- এর কারণে শহর ছেড়ে যারা গ্রামে যাচ্ছেন, তাদের একমাত্র জীবিকা হবে কৃষি। তাই তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষি পণ্যকে আধুনিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় নিতে পারলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হন। এটা বাংলাদেশে খুবই কম।

তিনি বলেন, বর্তমানে আধুনিক কৃষি পণ্যের বাজার ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এটা যদি ৪০ শতাংশের উন্নীত করা যায় তাহলে এক লাখ সুপার স্টোর আধুনিক ব্যবসায় চলে আসবে। তখন অতিরিক্ত ১২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের ব্যাবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা আখতার মাহমুদ সংলাপে বলেন, ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজটি যাদের কাছে যাওয়ার কথা তাদের কাছে যাচ্ছে কি না, তার উপর সরকারের নজর রাখতে হবে।

ঋণ দেওয়ার পর উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান বাড়ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখার উপর জোর দেন তিনি।

জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে (সিভিএফ) বাংলাদেশের বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। এখানে শ্রমঘন শিল্প বিশেষ করে পোশাক খাতের জন্যও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি বড় সুযোগ।

সাবেক এই মুখ্য সচিব বলেন, শহরের সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়ায় ‘আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পের’ প্রধান উদ্দেশ্য। গ্রামে এখন ওয়াইফাইসহ ডিজিটাল সব সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে সরকার। এই সুযোগে গ্রামে যে সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে তা দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।