বিদেশি ঋণের প্রবাহে কমছে সরকারের ব্যাংকের দেনা

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে প্রচুর ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2020, 08:05 PM
Updated : 24 June 2020, 08:10 PM

গত দেড় মাসের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, এআইআইবিসহ আরও কয়েকটি সংস্থার ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে।

বুধবারও চীনের নেতৃত্বে গড়ে উঠা এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) ২৫ কোটি ডলার ঋণ যোগ হয়েছে।

আগামী সপ্তাহেই বিশ্ব ব্যাংকের একটি ঋণের ২৫ কোটি ডলার যোগ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান।

কোভিড-১৯ এর কারণে সবকিছু প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব আদায় আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল, এবার অর্থবছর শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সে কারণে সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি করা হয়।

কিন্তু বিপদের এই দিনে প্রচুর বিদেশি ঋণ পাওয়ায় এখন আর ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হবে না। উল্টো শোধ করে অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা কমাতে পারবে।

ইতোমধ্যে সেই কাজটি শুরুও করে দিয়েছে সরকার।    

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকেই কমতে শুরু করে।

গত ৩১ মে ব্যাংক ঋণ কমে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এরপর ১১ জুন তা ৬২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকায় নেমে আসে।

সঙ্কটকালে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ পেতে সরকারের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করে তার যথাযথ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার দেশের সংকট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে ভালোভাবেই উপস্থাপন করতে পেরেছে। সে কারণেই তারা দ্রুত সাড়া দিচ্ছে।

“এখন আমাদের কাজ হবে এই টাকার যথাযথ ব্যবহার। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে এই টাকা খরচ করতে হবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় আইএমএফের ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের জরুরি সহায়তা বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হয়েছে গত ৩ জুন।

এর আগে ১৫ মে এডিবির ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা রিজার্ভে যোগ হয়। ২০ মে যোগ হয় আরও ২৫ কোটি ডলার।

এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-আইএসডিবি এবং এআইআইবি-এই তিন সংস্থার প্রায় ৬০ কোটি ডলার ঋণ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পেয়েছে বাংলাদেশ।

আর এতেই রিজার্ভ স্ফীত হয়ে রিজার্ভ বুধবার (২৪ জুন) ৩৫ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে, যা আগে কখনও দেশে ঘটেনি।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই এই মহাসঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। উন্নয়ন সংস্থাগুলো ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। আশা করছি, আমরা সাহসিকতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারব।”

আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংকট শুরু হওয়ায় ঋণ নির্ভরতা আরও বেড়ে যায়।

মূল বাজেটে ব্যাংক ‍ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।