পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ দেওয়া যেত না: প্রতিমন্ত্রী

কোভিড-১৯ মহামারীতে বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হলেও দেশের প্রকৃত চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2020, 12:39 PM
Updated : 24 June 2020, 12:39 PM

বুধবার এক ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি হিসাব দিয়ে বলেছেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সচল হলে সেখানে বিদ্যুৎ দেওয়ার মতো অবস্থাও থাকত না।

নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, “২০০৯ সালে আমাদের সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে এটা বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ হাজার ৪৩৬ মেগাওয়াট হয়েছে।

“এর মধ্যে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট। ওই চার হাজার মেগাওয়াট যদি বাদ দিই, তাহলে থাকে ১৯ হাজার মেগাওয়াট।

“এরপর ১০ শতাংশ হারে যদি (সক্ষমতার) কম উৎপাদন হয়, তাহলে আরও প্রায় ২ হাজার কমে থাকবে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। এরমধ্যে পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেগুলো প্রতি বছর একটা-দুইটা করে অবসর দেওয়া হচ্ছে, সেখান থেকে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ সব বাদ দিয়ে থাকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট।”

কোভিড মহামারীর কারণে অফিস-শিল্প কারখানা পুরোদমে সচল না থাকলেও দিনে বিদ্যুতের চাহিদা এখন ১২ হাজার মেগাওয়াট জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, এটা ভূল ধারণা।

“দেশে যে ১০৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ হচ্ছে, এগুলো শুরু হলে তাদের বিদ্যুৎ বিতরণ এখনও অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এই মূহুর্তে যদি মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্ক শুরু হয়ে যেত, তাহলে আমি ফেল করতাম।”

সিপিডি আয়োজিত ‘কোভিড-১৯: বাজেট ২০২০-২১: বিদ্যুৎ খাতের অগ্রাধিকার বরাদ্দ এবং বিকল্প প্রস্তাব’ শীর্ষক সংলাপে একথা বলেন নসরুল।

সিপিডি চেয়ারম্যান রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সংলাপে রেহমান সোবহান ব্যয়বহুল ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী চাহিদার হিসাব দেন।

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নানা পরিকল্পনাও তুলে ধরেন নসরুল।

তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশে বিশাল একটা বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। তারা বিদ্যুতের জন্য ইতোমধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আরও ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে।

“২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। ওই সময়ে উন্নত দেশের মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঞ্চালন লাইন তৈরি ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপরও জোর দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ৩০ বিলিয়ন ডলার লাগবে।

তবে বিদ্যুতের দামের বিষয়ে ‘ওপেন মার্কেট’র জন্য বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত নয় বলে মত জানান নসরুল।

সংলাপে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এখন সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন তারা।

“সঞ্চালন ও বিতরণে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জিত হলে শিল্প কারখানায় ক্যাপটিভের ব্যবহার কমবে। তখন গ্রিড বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।”

সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ম তামিম বলেন, গ্রীষ্ম ও শীতে বিদ্যুতের চাহিদার একটা বড় তারতম্য থাকে। শীতে বিদ্যুৎ রপ্তানি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা যায়।

সরকারের পরিকল্পনায় চাহিদা অনেক বেশি ধরা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “ডিমান্ড ফোরকাস্ট যেটা করা হয়েছে, তা খুব বেশি উচ্চাভিলাষী মনে হয়েছে। মাতারবাড়ি, পায়রা, রামপাল বাদে বাকি প্রজেক্টগুলো বাদ দেওয়া উচিৎ।

বিদ্যুতের দাম বছরে একাধিক বার বাড়ানোর সুযোগ বাতিলের দাবিও জানান তামিম।