মহামারীতেও রেমিটেন্সে উল্লম্ফন, হুন্ডি বন্ধও কারণ

করোনাভাইরাস মহামারীতে আমদানি ও রপ্তানি তলানিতে নেমে এলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছেই।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2020, 04:29 PM
Updated : 21 June 2020, 04:34 PM

বিশ্বজুড়ে মহামারী চলায় রেমিটেন্সে তার প্রভাব না পড়ার জন্য হুন্ডি বন্ধ হওয়াকেই কারণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিটেন্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিটেন্সে ঊর্ধগতির ধারা চলছে।

সেই ধারায় চলতি জুন মাসের ১৮ দিনেই ১২১ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে কখনই এত কম সময়ে এত বেশি রেমিটেন্স আসেনি।

রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থ বছরে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। সেই কারণে রেমিটেন্স বাড়ছে বলে এতদিন সংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন।

তবে মহামারীকালে ঈদ পেরিয়েও রেমিটেন্সের গতি দেখে হুন্ডি বন্ধ থাকাকেও এর কারণ মনে করা হচ্ছে।

প্রবাস থেকে বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের একটি অংশ দেশে আসে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসে না বলে ওই অর্থটি হিসাবের বাইরে থেকে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সব কিছু বন্ধ থাকায় হুন্ডিও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

“সে কারণে এখন আর অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে কোনো অর্থ আসছে না; সেই অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসছে।”

বিদেশে কর্মরত এই শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি

মহামারীর কারণে কোনো দেশের অর্থনীতিই স্বস্তিতে নেই। সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী যে অঞ্চলে রয়েছে, তেলের দামের নিম্নগতিতে সেখানেও চাকরিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সেই কারণে অনেকে জমানো অর্থও দেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে মনে করেন ছাইদুর রহমান।

“করোনাভাইরাসের মহামারীকালে পরিবারের-পরিজনের প্রয়োজনে সর্বশেষ জমানো টাকাও অনেকে পাঠাচ্ছেন। অনেকে আবার দেশে ফিরে আসার চিন্তাভাবনা করছে; তাই যা কিছু আছে সব আগেই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সব কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে।”

“কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমাদের অর্থনীতির প্রায় সবগুলো সূচকই এখন নেতিবাচক। আশার আলো জাগিয়ে রেখেছে একমাত্র রেমিটেন্স,“ বলেন তিনি।

চলতি বছরে গত ১১ জুন রেমিটেন্স এক হাজার ৭০৬ কোটি ৪০ লাখ (১৭.০৬ বিলিয়ন) ডলারে উঠে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার বেড়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সেই রেমিটেন্স এক হাজার ৭৫৮ কোটি ৪ লাখ (১৭.৫৮ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছেছে।

৩০ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ছাইদুর।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।

রেমিটেন্সের উপর ভর করেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।

রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।