লক্ষ্য ঠিক করে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের পরামর্শ রেহমান সোবহানের

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, লক্ষ্য ঠিক করে তা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয়ের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2020, 02:46 PM
Updated : 20 June 2020, 02:46 PM

পাশাপাশি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতেও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার ‘সিপিডি বাজেট ডায়লগ ২০২০’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপের সভাপতির বক্তব্যে তিনি সরকারের প্রতি এই তাগিদ দেন।

তিনি বলেন, “এটা ব্যবসার বছর নয়, এটা মানুষের জীবন বাঁচানো এবং তাদের কাছে অর্থ ও খাবার পৌঁছানোর বছর।

এই মুহূর্তে প্রধান তিনটি কাজ অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে কি কি করা যায়, তার একটা টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। এরপর সরকারকে ওই টার্গেট অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ পরিচালনা করতে হবে।

“এই সুযোগে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে যাতে জেলা হাসপাতালগুলোতেও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়।”

দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে তিনি বলেন, “সরকার দেশের মানুষকে বাঁচানো ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা কেমন করে ব্যবহার হচ্ছে তার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে এর সফলতা। এসব প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সঠিকভাবে অগ্রাধিকার বাছাই করতে হবে। এরপর যাদের বাছাই করা হবে তাদের কাছে যথাযথভাবে অর্থ কিংবা খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে হবে।”

আর এসব ব্যবস্থা মাঠ পর্যায়ে কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তার মনিটারং জোরদার করাকে তৃতীয় অগ্রাধিকার উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে করতে হবে।

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

“বর্তমান সরকারের আমলে গত দশ বছরে দেশে অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি অগ্রগতিশীল এবং উন্নয়নের মাধ্যমে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”

রপ্তানি খাতে পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য খাতের উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

একজন বক্তার সমালোচনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, “একেকটি মেগা প্রকল্প গেম চেঞ্জার বা দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এমন অবদান রাখবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকার প্রবৃদ্ধি না হয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। এখন বৈদেশিক বিনিয়োগের দিকে নজর না দিয়ে কোভিড-১৯ কিভাবে মোকাবিলা করা যায় সে চিন্তা করতে হবে।”

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত। স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা না থাকলে তা বাড়াতে হবে।”

তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি বাড়াচ্ছে। তার মধ্যে সরকার একজন পরিচালকের দায়িত্বপালনের সময় পাঁচ বছরের জায়গায় নয় বছর করছে। আবার এক পরিবার থেকে দুজন পরিচালককে সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে আরও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।”

প্যানেল আলোচক হিসেবে ব্রাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে তা যদি ঠিক মতো বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে আগামী অর্থবছরে দেশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে চলে যাবে।”

তিনি রাজস্ব বাড়ানোর কোনো কৌশল না থাকার সমালোচনা করে বলেন, “২০১০ সালে আমাদের রাজস্ব আহরণ ছিল জিডিপির ১১ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরে তা সাত শতাংশে নেমে আসতে পারে।”

রাজস্ব আহরণের এই দুর্বলতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনার শংকা জাগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালিতে সরকার কর্মচারীরা ছয় মাস বেতন না পেয়ে এখন তারা রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে।

“সেই পরিস্থিতি আমাদের এখনও হয়নি, কিন্তু বেশি দূরেও নয়।”

চলমান মহামারী আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে এমন শংকা প্রকাশ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এখন পর্যন্ত সরকার স্বাস্থ্য খাতের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। রাস্তায় কিংবা গাড়িতে মানুষ মারা যাচ্ছে।”

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতে লক্ষ্য ঠিক করে উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আরেক প্যানেল আলোচক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে যে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা খাতটিকে সমস্যায় ফেলতে পারে। একইসঙ্গে তিনি বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে বলে আশংকা করেন।

“তার চেয়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকেও ঋণ দিতে পারে।”