আত্মতুষ্টির বাজেট: অধ্যাপক আকাশ

নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ‘আত্মতুষ্টির’ ভাব ফুটে উঠেছে মন্তব্য করে অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, এটা শুভ নয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2020, 06:49 PM
Updated : 14 June 2020, 06:49 PM

২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ‘ইকোনমিক স্টাডি সেন্টার’র এক ভার্চুয়াল সংলাপে একথা বলেন তিনি।

আকাশ বলেন, “সমস্ত বাজেটে একটা আত্মসন্তুষ্টি আছে। (সরকার মনে করে) আমরা দুর্ভিক্ষ ঠেকিয়েছি, আমরা এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা বাজেট দিয়েছি, এটা সবটায় ঠিকমতো কাজ করবে এবং আমাদের অর্থনীতি জুলাই মাস থেকে ঘুরে দাঁড়াবে এবং জুলাই থেকে পরের জুন মাস পর্যন্ত আমরা ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছে যাব।”

“এভাবে আত্মসন্তুষ্ট হলে আমরা আর অগ্রসর হতে পারব না, এটা আমাদের দেশের জন্যও শুভ নয়,”বলেন তিনি।

এম এম আকাশ ও নাজনীন আহমেদ (ফাইল ছবি)

সংলাপে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “আসলে আমরা এবার আসলে অন্যরকম বাজেট পেয়েছি। কিন্তু যে অন্যরকম বাজেট দেখতে চেয়েছিলাম, সে অন্যরকম বাজেট আমরা পাইনি।”

স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য বাজেটে যে বরাদ্দ দিয়েছে সেই বরাদ্দ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কীভাবে করব? এই বরাদ্দ কীভাবে ব্যয় করব? এর দর্শন কী? এসব বিষয়ে বাজেটে কিছুই উল্লেখ নেই।”

দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নয়-ছয়ের আশঙ্কাও করেন নাজনীন।

“২ হাজার টাকার জিনিস যদি ১০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা হয়, তাহলে ওই বরাদ্দ দিয়ে কোনো্ কাজ হবে না।”

তিনি বলেন, মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সরকার কী করবে, তারও কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দেও কোনো দর্শন পাওয়া যায়নি।

“সুবিধাভোগীর আওতা বাড়ানো হলেও এই মহামারীতে কোনো মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত চাকরি হারালে তার জন্য সরকার কী করবে, তার কিছুই বলা হয়নি। একজন প্রবাসী বিদেশ থেকে ফেরত আসলে তার কর্মসংস্থানের জন্য সরকার কী করতে পারবে বা বিনিয়োগ করতে চাইলে তাকে কীভাবে সাহায্য করবে, তারও কিছু উল্লেখ নেই বাজেটে।”

বিআইডিএসের এই গবেষক বলেন, মহামারী থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েই দায় সেরেছে।

“সরকার মনে করছে কেউ চাকরি হারালে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তা থেকে সহযোগিতা পাবে, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টা এত সহজ নয়।”

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. ইকবাল কবির বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্য খাত কখনোই পরিকল্পিতভাবে ও গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার চিন্তা হয়নি। এই মহামারীর সময়ে আবারও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে আমাদের মৌলিকভাবে স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই‘র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, কোন দর্শনের উপর স্বাস্থ্য বাজেট হয়েছে, এটা তার কাছেও স্পষ্ট নয়।

সরকারকে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ধার না নিয়ে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ আহরণের পরামর্শ দেন তিনি।